আমাদের দেশে প্রচুর ছেলে মেয়ে হতাশ থাকে চাকরি আর স্যালারি নিয়ে! বিশেষ করে ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ারদের এই টা একটু বেশি চিন্তার ব্যাপার। এ কারনেই আমাদের দেশে কিছু জোক্স বা ফেজবুক স্ট্যাটাস দেখবেন! একজন ইঞ্জিনিয়ার এর স্যালারি আর একজন সিএনজি ড্রাইভার এর স্যালারি কম্পেয়ার করা হয় সে সব জোক্স এ।

আজকে আমি স্যালারি, জব সিকিউরিটি, সোস্যাল স্টাটাস নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মতামত দিব। পড়ে দেখতে পারেন, কিছু কনফিউশন দূর হবে আশা করছি। আরেকটা ব্যাপার, আমি খুবই ছোট একজন মানুষ তাই আমার মতামত আপনার সাথে মিলতে নাও পারে।

আমার এই লেখাটি আমি ফাউন্ডার এর দৃষ্টিকোন থেকে লেখা। আমি নিজে একজন এঞ্জেল ইনভেস্টর এবং আমার লেখাটি সেই অভিজ্ঞতা থেকেই। তাই আপনার ভালো নাও লাগতে পারে এই ব্লগটি।

ইঞ্জিনিয়ারিং স্যালারি এত কম কেন?

ছেলে-মেয়েরা প্রথমে যে কম্পেয়ার করে, একজন ফ্রেশ গ্রাজুয়েট এর বেতন! ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা মাত্র। যেখানে রাস্তার পাশে ঝালমুড়ি বিক্রেতা বা ফুচকাওয়ালা মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা ইনিকাম করে থাকে। তাহলে আমার এত্ত কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি লাভ হলো? বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরও একটু বেশি কষ্ট। এত এত পরিশ্রম সাথে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বেতন এই কয় টাকা মাত্র?

বলে রাখি, শুধু মাত্র লজিক্যাল ডিসকাশনের জন্য অনেক প্রফেশনের মানুষ কে এখানে টানা হচ্ছে। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি প্রতিটি প্রফেশনের মানুশ কে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি।

আচ্ছা, এবার আমাকে বলুন, একজন ফুচকাওয়ালা যদি ৫ বছর একই স্থানে ফুচকা বিক্রি করে, তাহলে তার ইনকাম কি সেই ৫০-৬০ হাজার থাকবে নাকি দের লাখ টাকা হবে? উনার ইনকাম মোর-অর-লেস একই থাকবে। খুব একটা পরিবর্তন হবে না। উলটা যদি উনার স্থান চেঞ্জ করেন, উনার ইনকাম কমে যেতে পারে।

এবার নিজের দিকে তাকান, আপনি যদি ৫ বছর একই ট্র্যাকে ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি করেন, কোম্পানি আপনাকে ১ লাখ টাকার নিচে স্যালারি অফার করার সাহস পাবে? আপনি হয়ত বলবেন, আপনি অনেক এমন অনেক কে চেনেন। যারা ৫ বছরের বেশি সময় ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি করে কিন্তু বেতন ৬ ডিজিট হয় নি। সেই ব্যাখ্যাটা নিচের দিকে দিচ্ছি। সামনে আগাই চলেন!

আচ্ছা ভালো কথা, একজন ফুচকা বিক্রেতা সপ্তাহে কয়দিন যেন কাজ করে? আর আপনি যেন কয়দিন করেন? আর ফুচকাওয়ালা সিক হয়ে ঘরে থাকলেও তো ইনকাম হয় না! আর আপনার তো অসুখ হলে বেতন কাটা যায়, না? আর ফুচকাওয়ালা তো গায়েবি ভাবে সিকনেস এলাউন্স পায়, আপনি তো পান না?

ইঞ্জিনিয়ারিং এ আপনার স্যালারি সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। ভাল ভাবে কাজ করে গেলে আপনার স্যালারি ১০-১২ লাখ টাকা হতে পারে। এটা শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ না, যে কোন প্রফেশনে হতে পারে। কিন্তু রাস্তার পাশে যে ঝালমুড়ি বিক্রি করে, তার ইনকাম কিন্তু প্রায় একই থাকবে। এই যে উন্নতির গ্রাফ, এটাই হচ্ছে আপনার ডিগ্রি বা স্কিলস এর রিটার্ন।

এর পরেও যদি কথাটা মাথায় না ঢুকে, যাস্ট চিন্তা করুন, রাস্তার পাশের ফুচকাওয়ালা মাসে ৫ লাখ টাকা ইনকাম করছে…

সোস্যাল স্ট্যাটাস কিছুনা আবার সব কিছু!

আমার একটা গ্রেট মোটিভেশন হচ্ছে, মানুষ কি ভাবল, সেটা যদি আমিই ভাবি, তাইলে মানুষ কি ভাববে? ওয়েল, আমি এভাবেই চিন্তা করি, এভাবে কাজ করি, তাই বলে কি আমি সমাজের বাইরে? দেখুন গ্রামে যে ফার্মার দিন আনে দিন খায়, তার লাইফ আপনার থেকে মিলিয়ন টাইম শান্তির। এখন আপনি পারবেন, সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফেরত যেতে? সব ছাড়া দূরে থাক, নিজের হাতের স্মার্টফোন এর ইন্টারনেট কয়েক ঘন্টা বন্ধ করে রাখেন তো?

আমরা না চাইলেও আমারা সমাজের পার্ট। আমরা অনেক কিছু করি যেটা থেকে পরিত্রান এর উপায় নেই। আচ্ছা, আবার ফুচকাওয়ালার কথায় ফেরত আসি। আপনি বিএসই ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বেতন পান ২৫ হাজার আর আপনার কম্পেয়ার করা ফুচকাওয়ালা ইনকাম করে আপনার ডাবল। এখন সমাজে আপনার যে ভ্যালু, তার কি সেই একই ভ্যালু? তার তো ইনকাম বেশি, আপনার ডাবল, তাহলে তার ভ্যালু আপনার ডাবল ধরাই যায়?

শুনেন, এই যে সোস্যাল ভ্যালু, এইটা আসছে আপনার ডিগ্রি থেকে, আপনার চাকরি থেকে। এখন আপনি যদি বলেন, সোস্যাল স্টাটাস ধুয়ে কি পানি খাবো? তাইলে আবার বলি, আপনি যে ডিভাইস থেকে এই ব্লগ পড়ছেন, সেটা ধুয়ে কি পানি খান?

আর একটা উদাহরন দেই, আমার বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে আমি কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার শিক্ষার্থীকে দেখেছি। যারা এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এর বেতনের ডাবল-ট্রিপল ইনকাম করে। জানেন মনে হয়, এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ করতে, পিএইচডি করে জয়েন করতে হয় অথবা প্রায় ৬-১২ বছর টিচিং এ যুক্ত থাকতে হয়। এখন এই যে শিক্ষার্থী, এদের কে কি আপনি বেশি ভ্যালু দিবেন?

বসরা সব ইনকাম নিয়ে যাচ্ছে!

প্রকাশ্যে না বললেও, ইমপ্লয়ীদের একটা বিশাল অংশের অভিযোগ, বসরা কম বেতন দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে, ছোট আর মাঝারি মানের কোম্পানিতে এই অভিযোগ বেশি থাকে। অনেকে মনে করেন, বসরা একটা টিম বানাইছেন, এখন আমাদের দিয়ে ইনকাম করিয়ে নিচ্ছেন!

আপনি কি জানেন এই টিম বানানোর আগের ঘটনা? আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে চিল করতে ব্যাস্ত ছিলেন, যখন সেমিস্টার ব্রেক গুলোতে টুর দিতেন, গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে হ্যাং-আউট করতেন, এই ফাউন্ডার রা তখন একটা টেকনোলজি শিখতে স্ট্রাগল করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হওয়ার পর আপনি যখন ৯-৬টা অফিস জব বেছে নিয়েছেন, এই ফাউন্ডার রা ২৪ ঘন্টা কাজ বেছে নিয়েছেন। একটা প্রডাক্ট মার্কেটে আনার জন্য ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, কিউএ সব কিছু একা হাতে করেছেন। চাকরিতে জয়েন করার পরে আপনার ফ্যামিলির কাছে আপনি একজন নায়ক হয়েছেন। কিন্তু আপনার এই সময়ে, একজন ফাউন্ডার চাকরিতে জয়েন না করার কারনে ধিক্কার পেয়েছেন পরিবার, সমাজ বা প্রেমিকার থেকে।

কাজ শুরু করার সাথে সাথে কিন্তু ফাউন্ডারা সফলতা পেয়ে যান নি। বছরের পর বছর কাজ করেছেন। বার বার ব্যার্থ হয়েও লেগে থেকেছেন। সবাই ছেড়ে যাওয়ার পরও, সবাই আশা ছেড়ে দেওয়ার পরও সে/তারা কাজ করে গেছে। এভাবেই ৫-১০ বছর কাজ করার পর আস্তে আস্তে একটা কোম্পানি তৈরি করেছেন।

আপনি যখন বৃহঃবার বিকালে চেক-আউট দিয়ে সব ভুলে যান, আপনার ফাউন্ডার রা তখন চিন্তা করে উইকএন্ড এ কিভাবে সাপোর্ট সামলাবে, কিভাবে স্যালারি দিবে আপনাকে।

তাহলে, এবার আপনি বলুন, আপনাকে যে স্যালারি দেওয়া হয় সেটা কি ঠিক না? তারা যে একটা বড় অংশ ইনকাম করে, এটা কি তাড়া ডিসার্ভ করে না?

স্যালারি কম নিয়ে শেষ কথা

হ্যা, চাকরি জীবনের শুরুতে আপনার স্যালারি কম থাকবে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। তবে অভিজ্ঞতা, আপনার চেষ্টা আর ভাগ্য ভালো থাকলে আপনার স্যালারি এক সময় ৬ বা ৭ ডিজিট হয়ে যাবে। দরকার শুধু ধৈর্য ধরে কাজ করে যাওয়ার। মার্কেটে আপনি যে ভ্যালু এড করবেন, স্যলারি তো তেমনি পাবেন।

তাই, স্যালারি কম হলেই চাকরি খারাপ, বা স্যালারি কম হলেই বসদের দিকে বাকা ভাবে তাকাবেন না। নিজের দিকে তাকান, স্কিল আপ করুন। স্যলারি এটোমেতিক্যালি আপ হবে।

0Shares
Previous post যে যে কারন গুলোর জন্য আপনি শিক্ষার্থী হিসাবে ব্লগিং করতে পারেন?
Next post সোস্যালিজম – পারিবারিক অশান্তির মুল কারন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ