টেকনো-হ্যাভেন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম ১২ই ডিশেম্বর ২০২০, শনিবার! লারাভেল ডেভেলপমেন্ট ইন্টার্নশিপ এর পজিশনের জন্য ক্যান্ডিডেট ছিলাম। কোডিং টেস্ট দেয়ার পর নিজের কাছে খুব আনইজি লাগছিল। আমার সাথে ড্যাশিং সুন্দরী যখন জানালো, সে নিজেও কিচ্ছু পারে নাই, সব ভুলে গেলাম।

টেকনো-হ্যাভেন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ তে কিভাবে কল পেলাম, পরিক্ষার সময় কি হলো সেটা নিয়েই আজকের ব্লগ! চলুন শুরু করি-

ওয়াসিফ ভাই এর সাথে অনেক আগের পরিচয়। আমি যখন ভার্সিটি শুরু করি, তখন ভাইয়ারা সিনিয়র। ভাইয়ার থেকে অনেক কিছু শিখছি, জানছি। সে সব বলে ব্লগ লম্বা করার চেয়ে মুল কথায় থাকি!

ভার্সিটির কোর্স শেষ দিকে, ধুমচে আবেদন করে যাচ্ছি। চাকরি, ইন্টার্নশিপ, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, সিইও এন্ড হোয়াটনট! চাকরির জন্য বিডিজবস, ক্যারিয়ার পোর্টলা, ওয়েব রিসার্চ করে আবেদন করছি।

যা হোক, এর মধ্য ওয়াসিফ ভাই কে বললাম। নরমালি ক্যারিয়ার রিলেটেড বা পার্সোনাল সমস্যা হলে ভাইয়ার সাথে কথা হত। তো ভাইয়া একদিন একটা ইমেল এড্রেস দিয়ে জানালেন, আবেদন ইমেইল করে দিতে।

আমি যেহেতু ক্যারিয়ার পোর্টাল নিয়ে আছি অনেক দিন, তাই সিভি এবং ইমেইল রেডি ছিল। ভাইয়া কে দেখিয়ে, ইমেইল করে দিলাম টেকনো-হ্যাভেন কোম্পানির এইচআর হেড এর কাছে।

ইন্টারভিউ কল, প্রস্তুতি আর কয়েক ঘন্টা দেরিতে পৌছানোঃ

কয়েকদিনের মধ্য টেকনো-হ্যাভেন এর এইচআর থেকে কল করে আমার ইন্টারভিউ ডেইট জানিয়ে দেয়া হলো। আমি সেটা নিয়ে ওয়াসিফ ভাই এর সাথে আলোচনা করলাম।

ভাইয়া কিছু বিষয়ে সংশোধন দিলেন আর কিছু পরামর্শ দিলেন। লারাভেল নিয়ে যেহেতু কাজ করব তাই কোডিং টেস্ট এর সময়ে কম্পিউটার থাকবে কি না জেন নিলাম। আর এটাও জানলাম যে, টেস্ট এর টাইম কম্পিউটার-ইন্টারনেট সব থাকবে।

  • প্রি-ইন্টারভিউ ডিসকাশনে জানলাম, নুডস নামে জাভাস্ক্রিপ্ট এ আসলেই একটা লাইব্রেরী আছে। হেহে!

যা হোক, পরিক্ষার আগের দিন আমার সিভি প্রিন্ট করে রাখলাম। এর বাইরে, ইন্টারভিউ এর জন্য তেমন কোন প্রস্তুতি নেয়া হলো নাহ।

ইন্টারভিউ এর দিন আমার বের হতে একটু দেরি হলো। কিন্তু রাস্তার জ্যাম এর কল্যানে স্পটে যেতে কিছুটা সময় দেরী হলো। কিছুটা মানে ঘন্টা দেরেক (লল)! এর পর অফিস খুজে বের করতে আরো আধ-ঘন্টা।

অবশেষে, ওয়াসিফ ভাই এর সহায়তায় ১২টার কিছু সময় আগে অফিসে পৌছাইতে সক্ষম হলাম। ২ ঘন্টা লেইট, তাই ভাবছিলা, সব ইন্টারভিউ শেষ। যাস্ট যাবো আর বের হয়ে আসব।

তবে যাওয়ার পর রিসিপশনে কথা বলে ভিতরে গেলাম। কিছুক্ষন অপেক্ষার পর আরেকজন ড্যাশিং সুন্দরী আসলেন। আমি ভাবলাম উনি হয়ত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।

আমি আগে ভাবতাম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে ছেলেরা বা মেয়েরা যারা রাত দিন পরিশ্রম করে সুন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছেন। কিন্তু উনাকে দেখে পুরা ধারনাই পালটে গেল। ভাবলাম, টেকনো-হ্যাভেনে চাকরির জন্য দরকার হলে অর্ধ-যুগ অপেক্ষা করব কিন্তু এমন ড্যাশিং সুন্দরী এর সাথে চাকরি আমার চাই চাই!

কোডিং টেস্ট নিয়েই শেষঃ

কিছুক্ষন পর আমাকে পরিক্ষার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। এবং সেই যে ড্যাশিং সুন্দরী, তাকেও নিয়ে যাওয়া হলো। আমি তখন বুঝলাম, উনিও আমার মত ক্যান্ডিডেট। হাহা।

তো, পরিক্ষার প্রশ্ন দেয়া হলো, কোডিং টেস্ট, ৬টা প্রশ্ন, ৩০ মিনিট। আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারন কোডিং করি না বহুকাল ধরে। আর ভাইয়া বলছিল, ডেভেলপমেন্ট এর প্রশ্ন হবে। যাই হোক, প্রশ্ন পরা শুরু করলাম।

একটা ভাব ধরে থাকলাম যে, আমি বিশাল বড় প্রোগ্রামার তাই প্রবলেম গুলো নিয়ে ভাবছি। শুরু করতে সময় লাগবে। আর ভিতরে ভিতরে ভাবছি, ক্যামেন সময় কাটাবো।

যা হোক, প্রশ্ন নিয়ে একটু কথা বা বললেই নয়। একটা প্রশ্ন ছিল যে, এইচটিএমএল সিনট্যাক্স এর, দেখে পরিচিত মনে হলো। কিছুটা গভীর লুক দিলাম। পরে দেখি যে, সেটা একটা বিশাল স্ট্রিং।

যারা স্ট্রিং নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন যে এটা কত পেইনফুল। এর উপর যদি স্ট্রিং হয় বিশাল বড় আর ক্যারেক্টার এর বাইরে সাইন থাকে, তাইলে সেটা হ্যান্ডেল করা কত কঠিন, যারা প্রোগ্রামিং পারে না তারাই জানে শুধু।

যাই হোক, লিখা শুরু করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে কিছু কন্টেস্ট আর প্রবলেম সলভ করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিছু লেখা শুরু করলাম। আমার মনে আছে, এলগোরিদম এর একটা প্রশ্নের উত্তর এ, আমি কয়েকটি গোল্লা আর কয়েকটি বক্স একেছিলাম শুধু।

পরিক্ষার সময়ে একটা ভুল করছিলাম টাইম নিয়ে। ৩০ মিনিট কে ২ ঘন্টা ভেবেছিলাম। তবে উনারা অবশ্য সমইয় বাড়িয়ে দিয়েছিল। নির্ধারিত সময় শেষে খাতা জমা দিলাম। হিসাব করে দেখলাম, একটা প্রশ্নও সমাধান করতে পারি নাই।

ড্যাশিং সুন্দরী আর ইন্টারভিউ হলোই নাঃ

খাতা জমা দেয়ার পর আমি বসে আছি। ভাবছি যে পার্সিয়াল নাম্বার দিলে কিছু হয়ত কিছু নাম্বার পেতে পারি। আর ক্যান্ডিডেট যেহেতু কম, পজিশন যেহেতু ইন্টার্নশিপ, তাই ইন্টারভিউটা দিয়ে যাবো।

একটা কনফিডেন্ট কাজ করছিল যে, ইন্টারভিউ বোর্ড এ আমি ফুল মার্ক বের করতে পারব। ইন্টার্ভইউ দিয়ে আর নিয়ে আমি পেকে গেছি অনেক আগেই।

ইন্টারভিউ এর অপেক্ষায় বসে আছি আমি আর সেই ম্যাডাম। আমি কিছু বলছি না, নিরবতা ভাংলো তিনিই। জিজ্ঞেস করলেন কেমন হয়েছে। আমি জানালাম, কিছুই পারি নাই।

উনি জানালেন, উনি সব এটেন্ড ই করেন নি। উনি নাকি প্রস্তুত ছিলেন না। এমনকি উনি পারবেন না কিছু করতে। বাদ যাবেন। এই কথা শোনার পর আমি পুরা রিল্যাক্স হয়ে গেলাম। থ্রি-ইডিওট এর কথা মনে পরে গেলো।

কথায় কথায় জানলাম, উনি ইন্ডিয়া থেকে বিটেক পাশ করেছেন। আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হয় নি জেনে উনি খুব অবাক হোলেন। একটু পরে আমাদের পরিক্ষক আসলেন।

উনি এসে জানালেন, আমাদের আর কিছু করতে হবে না। অফিস থেকে জানানো হবে যদি সিলেক্ট হই। আমরা ২জনই বুঝলাম, আমাদের কোডিং এত বাজে হয়েছে যে, ইন্টারভিউ তে কল করা হচ্ছে না।

লিফটে উনার সাথে আরও কিছু কথা হলেও, ফেজবুক আইডি বা নাম জানা হইল নাহ!

রাস্তার‍্য আসার সময় আমি ওয়াসিফ ভাই কে সরি বললাম। আমার ধারনা, আমি এত বাজে পরিক্ষা দিয়েছি যে, আমার জন্য উনাকে না বকা শুনতে হয়। তবে ভাইয়া জানালেন, প্রবলেম নাই।

ফলাফল, অভজার্ভেশন এবং রিজেকশন এর কারনঃ

টেকনো-হ্যাভেন কোম্পানিতে হার্ড রিজেক্টশন আসে। ইন্টার্নশিপ হয় নি সেখানে।

এমিউজিং অফিস। অনেকটা সরকারি অফিস এর মত। সুন্দর গোছানো। মনে হচ্ছিল, সব ডিপার্টমেন্ট গুছানো। বেসিক কোডিং পারলে যে কেউ এই ইন্টারভিউ পার হতে পারবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে সব থেকে কঠিন হচ্ছে ইন্টারভিউ তে কল পাওয়া।

মুলত বেসিক কোডিং সলভ করতে না পারার কারনেই টেকনো-হ্যাভেন কোম্পানিতে হার্ড রিজেকশন আসে। বেসিক কোডিং জানলে এখানে ইন্টার্নশিপ ম্যানেজ করা কঠিন কিছু না।

গালিব নোটস এর ইন্টারভিউ সেকশনের ব্লগ গুলো মুলত আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স করা জব ইন্টারভিউ নিয়ে। এখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার যেটা থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এর ইন্টারভিউ নিয়ে অনেকে জানতে পারবে।

0Shares
অ্যালগরিদম ফেইলুর Previous post অ্যালগরিদম ফেইলুর থেকে বিলিয়নিয়ার সবজি বিক্রেতা!
স্পাগ্রিন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ Next post স্পাগ্রিন ইন্টারভিউ এক্সপেরিয়েন্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ