জীবনে সফল হতে কে না চাই। মানুষ বলতেই জীবনে সফলতা চাই। আর সফল হওয়া খুব কঠিন কিছু না যতটা আমরা ভাবি আবার অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে অতটা সহজও না। সব মানুষেরই সফলতার চুড়ান্ত শিকরে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু সবাই কি পারে নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে? জীবনে সফল হওয়ার সিক্রেট কৌশল কি?

ইতিহাসের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিরা আমার তোমার মতই একেকজন পৃথিবীর আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ, ভিনগ্রহের আগন্তুক নন। প্রচেষ্টা আর সাধনায় তাঁরা ছাড়িয়ে গেছেন অন্যদের প্রতিদিন একটু একটু করে। একটুখানি উদ্যোগ নিলে তুমিও পারবে একদিন তাঁদের কাতারে নাম লেখাতে।

০১. স্বপ্ন দেখ কিন্তু লক্ষ স্থির করো নাঃ

অনেকেই হয়ত ভাবছেন এটা আবার কেমন কথা, স্বপ্ন দেখবো কিন্তু লক্ষ্য স্থির না করলে সফল হবো কিভাবে? স্বপ্নতো সবাই দেখে কিন্ত সেটা বাস্তবে রুপান্তর করতে পারে কতজন। যে বা যারা বলে আমি স্বপ্ন দেখি জীবনে বড় কিছু করার তাহলে তাদেরকে বলব, দেখলে বড় স্বপ্ন দেখ কিন্তু জীবনের লক্ষ্য ছোট বেলাতেই স্থির করে ফেলো না। যদি বলি স্বপ্ন আসলে কী? – স্বপ্ন হচ্ছে সেটা যেটা শুনলে লোকে চমকে উঠবে এবং লোকে বলবে না না এটা কখনোই সম্ভব না -তাই হলো স্বপ্ন । আর যেটা সম্ভব এবং ঘটানো সম্ভব সেটা তো বাস্তব এটা কখনোই স্বপ্ন হতে পারে না। বাস্তব জিনিসকে কেন আমরা স্বপ্ন বলবো? স্বপ্নের কথা শুনে লোকে যদি পাগলই না হলো তাহলে সেটা কখনোই স্বপ্ন না। তাইতো আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো, ইন্জিনিয়ার হবো, সাইন্টিস্ট হবো এগুলো সব পূরণ করা সম্ভব তাহলে এগুলো স্বপ্ন হলো কিভাবে!

সিইও হওয়া যায় কিভাবে জানতে চান? ৩ং কারন জানলে অবাক হবেন!

০২.খুঁজে বের করো কি সেই স্বপ্নঃ

সবার মাঝেই কিছু না কিছু ভালোলাগা থাকে। আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে থাকি সবাই কিছু না কিছু প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু নিজের প্রতিভা নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। হয়ত কেউ সেটা পারে কেউ পারে না। তাই ছোট বেলাতে পণ করার দরকার নেই যে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার আমাকে হতেই হবে। এখানে আমরা যদি একটা উদাহরণ দেখি ” ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং মহাকাশবিজ্ঞানী এ পি জি আবদুল কালামকে আমরা সবাই চিনি, তিনি ছোটোবেলা থেকে বিমানবাহিনীর পাইলট হতে চেয়েছিলেন এর জন্য তিনি দেরাদুনে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষাও দিয়েছিলেন এবং আট জনকে নেওয়া হবে সেখানে তিনি নবম হয়েছিলেন। প্রথমে ভেঙ্গে পরলেও হাল ছাড়েনি তিনি। তারপর তিনি ভারতের সবচেয়ে নামি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একজন হয়ে উঠলেন।

০৩. তোমার যা ভালো লাগে তাই করোঃ

সবার সব কিছু ভালোলাগে না। কেউ গান গাইতে ভালোবাসে তো কেউ ছবি আঁকতে আবার অনেকের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর প্রতি ভালো লাগাটা কাজ করে। তাই তোমার যেটা ভালোলাগে তাই করো কিন্তু যেটা করবে নিষ্ঠার সাথে করো। জীবনে সফল হওয়ার জন্য, কে কি ভাববে, কে কি বলবে, কার কি ইচ্ছা তোমাকে পূরন করতে হবে সেগুলো ভেবে কিছু করতে যেওনা।

০৪. প্রচন্ড পরিশ্রম এবং সাধনা করতে শেখোঃ

আমাদের সবার মাঝে কিছু না কিছু প্রতিভা আছে ঠিকই কিন্তু আমরা সবাই কি সেটা সঠিকভাবে কাজে লাগায়, না কখনোই না। যদি সত্যই আমরা সেটাকে কাজে লাগাতাম তাহলে আমাদের দেশ তথা বিশ্ব আজকের দিনে দাড়িয়ে আরো অনেক উন্নত হতে পারতো। আমাদের ভালোলাগা বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যদি লেগে থাকি বা চেষ্টা করি তাহলে আমারা জীবনে সফল হতে পারবো।

মেশিন লার্নিং নিয়ে কথা না বলা ফ্রেন্ডদের ইমিডিয়েটলি বদলে ফেলুন!

০৫. নেগেটিভিটি বা নেগেটিভ ভাবনা বর্জন করোঃ

নেগেটিভিটি খুবই খারাপ জিনিস যেটা তোমার প্রচেষ্টাকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম। সবার মাঝে সর্বক্ষেত্রে কিছু না কিছু নেগেটিভিটি কাজ করে এবং যেটা আমাদের দুর্বল করে দেয়। আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই এবং তখন সেই কাজটি যদি ঠিক মতো না হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সময়ে আমাদের মাঝে নেগেটিভিটি কাজ করে এবং আমরা হাল ছেড়ে দেয়। এতে করে আমাদের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু আমরা যদি মাঝ পথে থেমে না গিয়ে চেষ্টা করি হয়তোবা দেখা যাবে একবার না একবার আমরা সফল হবোই।

০৬. ব্যর্থ জীবন বলতে কিছু নেইঃ

সব জীবনই সফল তাই ব্যর্থ জীবন বলতে আসলে কিছু নেই। সবাইকে বিখ্যাত হতে হবে বা সবাইকে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্ক পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যে যেটুকু কাজ করতে সক্ষম তার সেই কাজটুকুই কারা উচিত। তাই নিজেকে ব্যর্থ ভেবে ব্যর্থতাই ভেঙ্গে পরার কিছু নেই।

০৭. কে কি বললো সেদিকে কান না দেওয়াঃ

তোমার সফলতার পথে হয়তো সব মানুষকে তুমি তোমার পাশে পাবে না, কেউ তোমার পাশে থাকবে কেউ থাকবে না। তাই সবাইকে উপেক্ষা করে নিজের পথে নিজেরই এগিয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের দেশে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখনি তার পরিবারের লোকেরা ঠিক করে ফেলে সেই শিশুটি বড় হয়ে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হতে হবে। ছোটোবেলা থেকে এইকথাগুলো শুনতে শুনতে বড় হওয়া শিশুগুলো তাদের পড়াশোনা এবং বড়দের স্বপ্ন পূরণের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের কি ইচ্ছা, তাদের কি ভালোলাগে অথবা তারা আসলে কি চাই সেটা ভাবতেই ভূলে যায়। আর এটি অনেক সময় তাদের সফলতার ক্ষেত্রে বাঁধার কারন হয়ে দাড়ায়।

০৮. একাগ্রতা বা প্যাশন থকতে হবেঃ

জীবনে সফল হওয়ার জন্য, যে কাজই করো না কেন, হোক কাজটি ছোটো বা বড় কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, থাকতে হবে একাগ্রতা বা প্যাশন। যত বাধা আসুক না কেনো তোমার কাজটি ঠিকভাবে করার চেষ্টায় কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। যেটা করবে মন দিয়ে করার চেষ্টা করো। কাজ করতে হবে শেখার জন্য, নিজে স্কিল কে আরেকটু লেভেল আপ করে জন্য।শুধু মাত্র দায় মেটানোর জন্য কাজ করলে উন্নতি আসবে না।

চাকরী ছেড়ে যাওয়া কর্মীরা কি স্টার্টআপ কোম্পানির এনিমি?

০৯. মনে রাখো প্রতিটি জীবনই সুন্দর এবং মূল্যবানঃ

ভাবতে শেখো কোনো জীবনই ব্যর্থ নয়। আমরা যে যা করছি বা করব, সেটা আমাদের নিজেদের কাছের মূল্যবান হওয়া উচিত। কোনো কাজেই ছোটো না তাই তুমি যেটাই করো সেটাই মূল্যবান। হতাশা নিজেকে গ্রাস করে নেয়ার আগে নিজেকে মোটিভেটেড করো। মনে রেখো, তোমাকে যে সব চাইতে বেশি সাহাজ্য করতে পারে, সেই ব্যক্তি তুমি।

১০. শিক্ষিত হওয়া জরুরীঃ

জীবনে সফল হওয়ার জন্য শিক্ষিত হওয়া জরুরি। কিন্তু সেটা জেনো শুধু একাডেমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না থাকে। শুধু লেখাপড়া শিখলেই কোনো মানুষ শিক্ষিত হতে পারে না। শুধু স্কুল কলেজে গেলেই কেউ শিক্ষিত মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। শিক্ষিত হয় তারা যারা তাদের আশেপাশের সবকিছু থেকে শিক্ষা নিতে পারে কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েই কেউ কখনো সফল হতে পারে না।

১১. ভালো ফলাফল সব কিছু নাঃ

আমাদের জীবনে ভালো ফলাফলও গুরুত্বপূর্ণ ফর আওয়ার ফারদার এডুকেশন। কিন্তু সফলাতার জন্য শুধু ভালো ফলাফলটা আবশ্যক নয় এটার পাশাপাশি আমাদের প্রাকটিক্যাল নলেজটা থাকা প্রয়োজন। অল্টারনেটিভ রাস্তা জানা না থাকলে অনেক বার হোঁচট খেতে হবে। যেমন ধরো, COVID19 ইস্যু তে এখন ন্যাচারাল ওয়ার্ক সম্ভব নয়। যাদের হাতে অল্টারনেটিভ নেই তারাই এখন সব চাইতে বেশি বিপদে আছেন।

১২. ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াঃ

মানুষ মাত্র ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই কোনো ভুল করলে ভুলটা থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভুলটাকে সঠিক বিবেচনা করো না যেটা তোমার সফলাতার পথে বাঁধার সৃষ্টি করবে। উন্নতি করতে চাইলে, নিজের ভুল কে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সমালোচনা গ্রহণ করতে হবে। তাই বলে ব্লাইন্ড ভাবে সব কিছু মেনে নেয়া যাবে না। কি করসো সেটা বুঝে করো।

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

১৩. আশা করো নাঃ

আশা করো না, চেষ্টা করো ।কখনোই কোনো কাজ করতে গিয়ে আশা করো না। তোমার আশা পূরণ না হলে তুমি দুর্বল হয়ে পরতে পারো। তাই চেষ্টা করে যাও, কে বলতে পারে হয়তো তুমি যেটুকু ভেবেছিলে তার থেকেও বড় কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

তাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে তোমারা যখন সফল হবে তখন তোমাদের সাথে সাথে সফল হবে গোটা দেশ।যখন তোমারা নিজেদেরকে সফলভাবে গড়ে তুলতে পারবে – তখনই তোমার নিজেরকে পূণাঙ্গ মানুষ হিসাবে দাবি করতে পরবে। এ জীবন তোমার। তোমাকেই সাফল্যের দুয়ার খুঁজে নিতে হবে। তোমার ভাগ্য তোমার কপালে নয়, তোমার হাতেই। তাই এখন থেকেই নিজেকে গড়ে তুলো সফলতার মুকুট পরার জন্য।

জ্যোতির্ময়ী সাহা (জ্যোতি),

৭ম সেমিস্টার, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট,

ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি,

Email- jyotirmoyisaha14@gmail.com

Jyotirmoyi Saha Jyoti
0Shares
গার্লফ্রেন্ড এর ফেজবুক আইডি হ্যাক করে দেয়া হয় Previous post এখানে গার্লফ্রেন্ড এর ফেজবুক আইডি হ্যাক করে দেয়া হয়?
সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার Next post সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!
Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ