আজকের ভিডিওতে আমি আপনাদের জানাবো, কম্পিউটার সায়েন্স এর স্টুডেন্ট হিসেবে, কি কি কাজ করলে, আপনার ফিউচার ক্যারিয়ার নিশ্চিত ভাবে ধ্বংস হবেই। আপনি যদি পড়া-লেখা শেষে চাকরি করতে না চান, বা বেকার ঘুরে ঘুরে অন্যদের সফলতার পোস্টে লাইক দিতে চান, তাহলে আজকের ভিডিও খুবই গুরুত্বপুর্ন আপনার জন্য।
ভাবছেন, এমন কেউ আছে নাকি, যে ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চায়? আপনি জেনে অবাক হবেন যে, অধিকাংশ কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থী এই কাজ গুলা করে যাচ্ছে।
তবে আপনি যদি, ট্র্যাপ গুলা এভয়েড করতে পারেন, তাহলে সহজেই ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন।
এই ভিডিওটি যথেষ্ট লম্বা হবে। আপনি যদি রিলস দেখে ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে আজকের ভিডিও আপনার ভালো লাগার কথা না।
ক্যারিয়ার ধ্বংসের প্রথম উপায় হচ্ছে, ফুল এআই ডিপেন্ডেন্সি। সিনিয়রা বলছে, এয়াই শিখো, এটাই ভবিশ্বত। আপনিও দেখলেন, এসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে, প্রজেক্ট আইডিয়া, এয়াই সব সহজ করে দিচ্ছে। তাহলে নিজের আর শেখার দরকার কি?
এটা ভেবে, আপনি যদি এয়াই এর উপর ফুল ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যান, তাহলে আপনাকে কংগ্রাচুলেশন। আপনি ক্যারিয়ার ধ্বংসের প্রথম কাজ সফলতার সাথে করে ফেলছেন।
প্রসংগত একটা এক্সামপ্ল না দিলেই নয়। আপনারা হয়ত জানেন মায়ের দোয়া ক্রিকেট টিমের কথা। এরা খেলতে যায়, গো হাড়া হাড়ে, সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে, আমরা শিখতেছি। এই যে এদের শেখা, এটা চলতেছে, আর চলতেই থাকবে। প্রতিভাবান খেলোয়ার কিন্তু সেই প্রতিভা আর বিকশিত হয় নাহ।
এই দল আগামী কয়েক যুগেও কিছুই করতে পারবে না।
এটার অনেক গুলো কারনের মধ্য একটা রুট কারন আছে। শুরু থেকে ক্রস ব্যাটে খেলা, রানের জন্য খেলা। এরা খেলা শিখে না, কোন বল কিভাবে বিবেচনা করতে হবে সেটা শিখে নাহ।
একই ভাবে, আপনি যখন সব কিছু এআই দিয়ে করবেন, আপনার কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার শেখা হবে নাহ।
আমাদের মনে রাখতে হবে, কোম্পানি গুলা ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করে সেই সব কাজ করার জন্য, যেটা টুলস করতে পারে নাহ।
এখন আপনি চিন্তা করেন, আপনি সমস্ত কাজ এয়াই টুলস দিয়ে করেন। তাহলে, কোম্পানির কি আপনাকে হায়ার করা উচিৎ?
স্টুডেন্ট লাইফে আপনার মিনিমাল এয়াই টুলস ব্যাবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্টুডেন্ট লাইফ হচ্ছে আপনার শেখার সময়। আপনি কিছু কম মার্ক পেলে তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আপনি যদি না শিখেন, আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এআই টুলস কিভাবে কাজ করে সেটা শিখুন, কিন্তু এয়াই টুলস ব্যাবহা ম্যাসিভ লেভেলে ব্যাবহার করে, ক্যারিয়ারের ক্ষতি করবেন নাহ।
পরের টিপস এ যাওয়ার আগে বলি, অনেক সিনিয়র বলে থাকেন, এয়াই হচ্ছে ফিউচার। এয়াই দিয়ে কাজ না করলে, আপনার জব খেয়ে দিবে। এই সব কথা বার্তা সব ভোগাস। আমি বিস্তারিত ভিডিও পাবলিশ করব এটা নিয়ে, দ্রুতই।
পরের যে কাজটা করলে, আপনার ক্যারিয়ার নিশ্চিত ধ্বংস হবেই, সেটা হচ্ছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং না শেখা। কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়বেন কিন্তু কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখবেন না, এটা হবে আপনার আন্ডারগ্রেড বা ডিপ্লমার মুল লক্ষ্য।
আপনি যদি সফল ভাবে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং না শিখে ডিগ্রি কমপ্লিট করতে পারেন, তাহলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা শুন্যর কোঠায় নেমে আসবে। জাস্ট প্রোগ্রামিং টা এভয়েড করবেন, তাহলেই হবে।
এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার থেকে মোটিভেশন নিবেন, সিএসই মানেই প্রোগ্রমিং নাহ। প্রোগ্রামিং ছাড়াও আরও ওনেক ক্যারিয়ার আছে। ইউয়াই-ইউক্স ডিজাইনার হচ্ছে, সেকেন্ড মোস্ট পপুলার জব। একটু সার্চ দিলে অনেক পাবেন।
২-১ জন হয়ত ভাবছেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং না করে কি সিএসই ডিগ্রি শেষ করা যায়? আরে ভাই, এই দেশে সিএসই হচ্ছে একটা অন্যতম জনপ্রিয় স্ক্যাম ডিগ্রি। এ দেশে প্রচুর ভার্সিটি আছে, যেখান থেকে আপনি এ গ্রেড নিয়ে অনার্স শেষ করতে পারনে, কম্পিউটার কিভাবে স্টার্ট করে, সেটা না জেনেই।
ক্যারিয়ার বরবাদ করার জন্য পরের যে কাজ করতে হবে, সেটা হচ্ছে, হ্যালো ওয়ার্ল্ড প্রিন্ট করে মেশিন লার্নিং, এয়াই তে ডাইভ দিতে হবে। মেশিন লারনিং, ডিপ লার্নিং বা এআই নিয়ে কথা বলতে কুল লাগে। এ কারনে, অনেকেই বেসিক কম্পিউটেশন না শিখে, মেশিন লারনিং এর টিউটোরিয়াল দেখেন।
আমার জ্ঞ্যানে মনে হয়, কম্পিউটার সায়েন্স এর প্রথম ২ বছর প্রচুর কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করা উচিৎ। ডিপ লেভেল আন্ডারস্ট্যান্ডিং, প্রবলেম সলভিং, ডেটা স্ট্রাকচার বা এলগরিদম, এগুলা তে মিনিমাম ২ বছর সময় দিয়ে, তার পর অন্য কিছু করা উচিৎ।
আপনি যদি ক্যারিয়ারে ফেইলুর হতে চান, তাইলে এই সব কিছই করা যাবে না।
পরের কাজ টা হচ্ছে, কোন ভাবেই নেটওয়ার্কিং করবেন না। অনেকে বলে থাকেন, আপনার নেটওয়ার্ক ইজ ইকোয়াল টু আপনার নেটওয়ার্থ। কিন্তু আপনার কেইস তো আলাদা । ভার্সিটির ক্লাস, এসাইনমেন্ট, ফেন্ডস হ্যাং আউট, বাসায়ায় এসে আবার সোস্যাল মিডিয়ার, নতুন যুক্ত হয়েছে রিলস, টিকটক। এত কিছুর পর সময় কই, নেটওয়ার্কিং করার।
এর পরের কাজ হচ্ছে, সকল দায় দায়িত্ব, ব্যার্থতার কারন ভার্সিটির উপর দায় দিয়ে দিবেন। আর ফিন্যানশিয়াল সমস্যা হলে, ফ্যামিলির উপর দায় দিয়ে দিবেন। আপন যত বড় ফেইলুর হতে চান, তত বেশি অন্যদের উপর দায় দিতে হবে। আপনি পড়বেন নাহ, অনলাইনে এত এত ফ্রি রিসোর্স থাকতেও শিখবেন না কিন্তু এর দায় আপনি নিবেন না। এভাবে চলতে থাকলেই, আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হবেই।
সেমিস্টার ব্রেক আসলেই আপনি টুরে চলে যাবেন। এতে করে আপনার ক্যারিয়ার ধবংসের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবেন সহজেই। আমার দেখা অনেক সার্কেল ছিল, যারা সেমিস্টার ব্রেক আসলেই টুরে চলে যেত, তাদের বেশির ভাগ এখনও বেকার। এতে মধ্য অনেকে সিএসই লাইনে টিকতে পারে নাই।
আপুরা যারা ছিল, তারা বিয়ে করে জামাই এর গলায় ঝুলে পড়ছে। ভাইদের অনেকে আবার দেশের পড়া শেষ করে, বিদেশে পড়তে গেছে, কিন্তু চাকরির কোন খবর নাই।
হালের নতুন একটা অপশন যুক্ত হয়েছে, ক্যারিয়ার ফেইল করার জন্য। সেটা হচ্ছে, ডেইলি রিলস ডেইলি শেষ করা। বাসায় আসা মাত্রই মোবাইল হাতে নিয়ে রিলস এ ঢুকে পড়বেন। এর পর টিক-টক, শর্টস আছে। মাঝে রাতের খাবার বিরতি দিয়ে বাকী সময় রিলস এ ডুবে থাকলেই, আপনার ক্যারিয়ার ফেইল করার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।
ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য, আরেকটা ছোট্ট কাজ করা লাগবে। সেটা হচ্ছে, ইংরেজী শিখবেন নাহ। ইঙ্গরেজী পারি না বলে, ৪ বছর কাটিয়ে দিবেন, কিন্তু ৬ মাস চেষ্টা করে, ইঙ্গরেজীতে কথা বলা শিখবেন নাহ। এতে করে, অনেক কোম্পানির ইন্টারভিউ রাউন্ড থেকে বাদ পরবেন আপনি।
লাস্ট একরা উপায় বলছি, নিশ্চিত ক্যারিয়ার ধবংস করার জন্য। এমন একটা এফেয়ার এ জরাবেন, যেটার কোন ফিউচার নেই। পার্টনার এর লাইফ গোল নাই, ফুল লাইফলেস, আসছে ফুটানি করার জন্য সিএসই তে। আপনার তাকেই লাগবে।
এর পর আপনি রাত দিন তার কাজ করে যাবেন। আর তার মানুষিক অত্যাচার সহ্য করে যাবেন। তাহলে, আপনার পড়া-লেখা আর স্কিলস এর ১২ টা বেজে যাবে। আর নিশ্চিত ভাবেই আপনার ক্যারিয়ার অক্কা পেয়ে যাবে।
তবে একটা কথা বলে রাখি, যে যাওয়ার সে যাবেই। তার সমস্ত কাজ কর্ম করে দিলেও যাবে। আর যাওয়ার সময় বলবে, আমি তো রাজি না, ফ্যামিলি জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। ছেলে হলে বলবে, আমার মা মানছে না। আর যার থাকার, সে থাকবেই।
হার্ড বাট রিয়েলিটি হচ্ছে, ক্যারিয়ার থাকলে আপনি বেটার পাবেন। ক্যারিয়ার না থাকলে, কিছুই পাবেন নাহ।
কিন্তু যেহেতু আপনার ক্যারিয়ার ধংস করা লাগবে, তাই আপনার তাকেই লাগবে।
এর বাইরে ছোট ছোট কিছু কাজ করা যায়, ক্যারিয়ার দ্রুত ধ্বংস করার জন্য। ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করা, ক্লিক করে টাকা ইনকাম, সহজে ইনিকামের ধান্দা করতে পারো। হ্যাকাথন, কন্টেস্ট, ভলেন্টিয়ারিং এগুলা সতর্কতার সাথে এভয়েড করতে হবে।
আপনি যদি এই কাজ গুলা করেন, তাহলে ৯৮% কনফার্ম যে, আপনার সামনের ক্যারিয়ার ধ্বংস হবে।
ভাবছেন, ২% এর কী হবে? এর মধ্য ১% এর বাপের সফটওয়্যার কোম্পানি আছে। আর বাকী ১% এর ফ্যামিলি টাই সফটওয়্যার ব্যাবসা আছে। তাই তারা উপরের সব কিছু সফল ভাবে করার পরেও, ক্যারিয়ার ধবংস হবে নাহ।
আপনি যদি নিজের সাথে মিলিয়ে দেখেন, এর মধ্য অনেক গুলা বা সব গুলাই আপনি করে যাচ্ছেন। এগুলা থেকে বের হন সময় থাকতে।