২০৩০ সালে আমাদের গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকবে না!
প্রথমেই বলে রাখি, এই লেখাটি কোন স্পেসিফিক বিস্ববিদ্যালয় কে কেন্দ্র করে লেখা না। আমার ব্লগ এবং ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অনেকের সাথে কথা হয়। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই ব্লগ। হতে পারে আমার ধারনা ভুল, বা হতে পারে আমি মুদ্রার এক পিঠ দেখছি। সে সব নিয়ে লজিক্যাল ডিসকাশনের জন্য কমেন্ট বক্স খোলা আছে।
আমি কোন ভাবেই বাইবেল প্রডিউস করছি না। এই লেখাটি শুধু মাত্র, আই রিপিট, এটা শুদ্ধু মাত্র আমার ব্যাক্তিগত মতামত। তাই এই লেখা আপনার মতামতের বিরুদ্ধে যেতেই পারে। আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।
অভারভিউঃ
ইন্ডাস্ট্রি চায় রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স, প্রব্লেম সলভার। আর আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তৈরি করছে অন্ধ ডিগ্রি ধারী। আমি এমন কম্পিউটার সায়েন্স এর ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীদের চিনি যারা কম্পিউটার সায়েন্স এর সামান্য বেসিক জ্ঞান রাখে না।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর খবর জানি না। তবে এদেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা ভয়াবহ! একজন শিক্ষার্থী কোন রকম কিচ্ছু না জেনে, শুধু মাত্র মুখুস্ত করে খুব ভালো ফলাফল নিয়ে গ্রাজুয়েশন করতে পারে।
আরও ভয়াবহ কথা হচ্ছে, কম্পিউটার সায়েন্স এর ৯০% এর বেশি শিক্ষার্থী কিছু না জেনে, না বুঝেই গ্রাজুয়েট হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে আমার কোন সার্ভে করা নাই, তবে আমার নিজের ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য ৪-৫ জন চাকরি করে। বাকীরা কিন্তু ব্যাবসা করছে না, বাকীরা বেকার।
এখন এইটা শুধু আমার ব্যাচের না, অন্য ব্যাচ গুলোতে এরকম অবস্থা। আমি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলি। গ্রাজুয়েশন শেষ, রেজাল্ট ৩.৫০ এর উপরে কিন্তু জানেই না, কি করতে হবে। কি কি কাজের সুযোগ আছে সেটা পর্যন্ত জানেই না। এ কারনেই গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকে না।
এই ধরনের গ্রাজুয়েট তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের ব্যাবসা চালিয়ে নিতে পারলেও, ইন্ডাস্ট্রিতে এই গ্রাজুয়েটদের ফুট পয়সার দাম নেই।
একটু খোজ নিলেই দেখবেন, কম্পিউটার সায়েন্স নির্ভর কোম্পানি গুলো কি পরিমান কর্মী শুন্যতায় ভুগছে। দিনের পর দিন ভ্যাকেন্সি পোস্ট পড়ে থাকে। কয়েকশ আবেদন থেকে ১-২ জন নেয়ার অবস্থা থাকে না।
তাহলে, আমাদের লাখ লাখ গ্রাজুয়েট যায় কোথায়? বেকার!
যুক্ত হয়েছে নতুন থ্রেডঃ
এক দিক দিয়ে ছেলে মেয়েরা কিচ্ছু না শিখেই গ্রাজুয়েট হচ্ছে, অন্য দিকে টেকনোলজি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা গত দশকে দেখেছি টেকনোলজির বিবর্তন। কিভাবে আমাদের ডেটা ট্র্যাক করা হচ্ছে। আমাদের উপর কিভাবে সেটার এনালাইসিস থেকে মার্কেটিং করা হচ্ছে।
নিশ্চয় আপনারা কেমব্রিজ এনালিটিকার কথা ভুলেন নাই। হুউয়ায়ে এর সাথে গুগোল এর গ্যাঞ্জাম তো মাত্র কয় দিন আগের ঘটনা।
এই দশকে মেশিন লার্নিং, বায়ো-ইনফর্মেটিক্স এর আরও উন্নতি আসবে। তখন এই টেকনোলজির কারনেই অনেক জব ফিল্ড নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিমধ্যই টেকনোলজি অনেক জব খাওয়া শুরু করেছে। আপনারা যে আগে ঘড়ি পড়তেন, রেডিও শুনতেন, বই পড়তেন এই সব গুলোর জন্য কি আগের মতই অনেক ডিভাইস ব্যাবহার করেন?
কেন ২০৩০ এ গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকবে না?
আমার ব্যাক্তিগত ধারনা, এই ডিকডে টেকনোলজি কয়েক ধাপ আগাবে। আমাদের হাতে ৬জি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আছে। এগুলো লাইভ হলে পরিস্থিথি কি হবে সেটা কিন্তু কেউ জানে না।
এই টেকনোলজি গুলো মার্কেট এ আসলে রেগুলার অনেক চাকরি থাকবে না। ট্রেডিশনাল চাকরির বদলে কিছু ইন্টেলিজেন্ট চাকরি আসবে। যে গুলোতে লাগবে সমস্যা সমাধান করতে পারে এমন মানুষ। ডিগ্রি দিয়ে কিচ্ছু আসবে যাবে নাহ। দেখা যাবে, ২০৩০ সালে এই রকম গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকবে না!
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কি করা উচিৎ?
সবার প্রথমে গোয়ারামি থাকে বের হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সঠিক ট্র্যাক এ নাই, এই ধ্রুব সত্য মেনে নিতে হবে। সমস্যা আছে সেটা মেনে নিতে হবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, কেউ সমালোচনা করলেই তাকে এন্টি পার্টি বানিয়ে নেয়া যাবে না।
সমস্যা গুলো আইডেন্টিফাই করতে হবে। সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। এই ব্যাপারে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে আমি কনসাল্টেন্ট হিসাবে কাজ করতে প্রস্তুত আছি। কারন, আমি চাই সমস্যা গুলোর সমাধান হোক।
একজন শিক্ষার্থী যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে আমাকে নক দেয় কি করবে, আমার কিছু করা থাকে না। অথচ এই একই শিক্ষার্থী কে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর একটা সিস্টেম এর মধ্য দিয়ে নেয়া যেত, তাহলে সে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়ত না। বিশেষ করে যাদের কে তার ফ্যামিলি শেষ সম্বল বিক্রি করে পড়ান, তাদের দূর অবস্থায় কিছু বলার সুযোগ থাকে না।
আবার, একজন শিক্ষার্থী ৫০-৮০ হাজার টাকা সেমিস্টার ফিস দিয়ে তার পর যখন ইউডেমিতে যেতে হয় প্রোগ্রামিং শেখার জন্য, এটা লজ্জ্বার। কিন্তু এই লজ্জ্বা কার সেটা কি বুঝার ক্ষমতা আছে?
ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে কোলাব করতে হবে। কি চায় তারা, আমাদের কি নেই সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
একটা ব্যাপার বলে রাখি। সময় চেঞ্জ হচ্ছে, এখন আপনি যদি সিস্টেম চেঞ্জ না করেন, তাহলে সমস্যাটা আপনার। ইউনিভার্সিটি ক্যাটাগরি করার সময়ে আপনার ডিপার্টমেন্ট কি বি ক্যাটাগরিতে থাকে নাকি সি নাকি থাকেই না? প্রচুর শিক্ষার্থী পাচ্ছেন বলে সামনেও পাবেন সেটা ভেবে বসে থাকলে সমস্যা আপনার ই হবে।
এক সময় ডিগ্রি থাকলে চাকরি হয়ে যেত। কিন্তু এক সময় ইন্ড্রাস্ট্রি দেখল যে, ডিগ্রি ছারাও ভাল ইঞ্জিনিয়ার আছে। তখন কোম্পানি গুলো ডিগ্রির ব্যাপারে একটু শীতল হল। এর পর দেখা গেলো, ডিগ্রি থাকলেও বেশিরভাগ ভালো করে না কিন্তু ডিগ্রি ছাড়া যারা তারা বেশি ভালো করছে।
তখন কোম্পানি গুলো স্কিল ফোকাস করা শুরু করল। এভাবেই টাইম টু টাইম কোম্পানি গুলো এডাপ্ট করে নিবে। আর আপনি নিবেন না? তাহলে আপনি মার্কেট এ টিকবেন কিভাবে?
কোম্পানি গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের উপর নির্ভর করে অনেক প্রেফারেন্স পেয়ে থাকে। এটার কারন হচ্ছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বুঝেন সমস্যা, তারা আপডেট করেন। বাইরে থেকে এক্সপার্ট নিয়ে আসেন। তারা কিন্তু আগাবে। আর আপনি?
যে কোন সমস্যা সমাধানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, সমস্যা আছে সেটা মেনে নিতে হবে। আর সমস্যা জানার অন্যতম সহজ রাস্তা হচ্ছে, মতামতের স্বাধীনতা। সমালোচনা করার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড বানানো। কেউ যদি সমলোচনা করে, তাকে এন্টি পার্টি না ভেবে, তাকে ইনভাইট করুন, সমস্যা সমাধান তার থেকেই নিন।
শিক্ষার্থীদের কি করা উচিৎ?
আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থী হন, তাহলে প্রথমেই ভুলে যান যে আপনার ইনিস্টিউশন আপনাকে কোন সার্ভিস দিবে। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। শেখাটা নিজের, তাই নিজেকেই আগাতে হবে।
সমস্যা সমাধান করা শিখতে হবে। কিভাবে একটা সমস্যা সমাধান করতে হয় সেটা শিখুন। কিভাবে সমস্যার মুলে যেতে হবে, কিভাবে বেরিকেট আসলে সেটা অভারকারম করা যাবে সেটা শিখতে হবে। বাস্তব জীবনের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হবে।
যেমন আপনি যদি একটা ল্যাংগুয়েজ ট্রেন্ডিং দেখে সাথে সাথে শেখা শুরু করেন, হতে পারে ল্যাংগুয়েজ শেখা শেষ হওয়ার আগেই অন্য টা ট্রেন্ডিং এ চলে আসছে। তখন কি করবেন?
কিন্তু যদি আপনি কিভাবে একটা সমস্যা সমাধান করা যায়, কিভাবে একটা ল্যাংগুয়েজ শিখেন, তাহলে আর সমস্যা হত না। যেটাই ট্রেন্ড এ আসুক না কেন, সেটাই শিখে নিতে পারতেন কারন কিভাবে শিখতে হয় সেটা তো আপনি জানেনই।
যদি আপনি নন-কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থী হন, আপনার জন্য এই পরামর্শ প্রয়োজ্য। এর সাথে সাথে আপনাকে প্রোগ্রামিং শিখতেই হবে। টেক এর এই ডিকডে টিকে থাকতে হলে, কম্পিউটার এর সাথে কথা বলতে পারাই লাগবে আপনা।
ফুট নোটঃ
এই পোস্ট এই ব্লগে কিছুদিন পর থাকবে কি না জানা নেই। কারন আমাদের দেশে উপর মহলের কিছু লোক আছে, যারা মনে করেন, ভুল ধরা মানেই তাদের এন্টি পার্টি। ভুল ধরা মানেই খারাপ আর তাদের ক্ষতি করা।
আমাদের কালচারটা এমন যে, কোন টিচার বা সিনিয়রের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানেই, আপনি বিনা হিসাবে বিয়াদব। বিনা হিসাবে আপনার পিছে কিছু লোক পড়ে থাকবে।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অনেক লাইফ লেস আছে আমাদের। ওই যে ৯০% গ্রাজুয়েট যারা কিচ্ছু না জেনে, না বুঝে গ্রাজুয়েট হচ্ছে, তাদের একটা অংশ ফ্যাকাল্টি হওয়ার জন্য অন্যদের পিছে পড়ে থাকে। হয়ত এই পোস্ট তাদের চোখে পড়লে এখানে আর রাখা সম্ভব হবে না।
আমি সামান্য একজন অতি সাধারন মানুষ। আমাড় কারও সাথে ক্ল্যাশিং এ যাওয়ার সামর্থ বা ইচ্ছা কোনটাই নাই। আমি তো চাই, মুল সমস্যার সমাধান হোক। সমস্যা নিয়ে কাওকে না কাওকে কথা বলাই লাগবে। কাওকে ফ্রন্টলাইনে এসে ট্রেডিশন ব্রেক করাই লাগবে।
সেটা আমি হওয়ার চেষ্টা করি।
এখন আপনি এই ব্লগ পড়ছেন মানে আপনি লাকি। ব্লগ এখনো পাবলিশ আছে। আপনি এটা ফেজবুকে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আরও অনেক কে জানাতে পারেন। গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকবে না কেন জানলে তারাও সতর্ক হতে পারবে।
একটা ফেজবুক শেয়ার আপনার ৫মিনিট এর ব্যাপার কিন্তু আমাকে সারা জীবন উৎসাহ দিবে…
One thought on “২০৩০ সালে আমাদের গ্রাজুয়েটদের কোনো চাহিদাই থাকবে না!”