কম্পিউটার সায়েন্স খুব অদ্ভুত একটা সাবজেক্ট। কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়ে কেউ কেউ গুগোল ফেজবুক এ চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাচ্ছে পাশ করার আগেই আর অপর দিকে শিংহ ভাগ শিক্ষার্থীকম্পিউটার সাইন্স পড়া শেষ করে গ্রাজুয়েট হয়ে কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে যাচ্ছে!

কি অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন। এত কষ্ট করে পড়ে, ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এর ফিল্ড বাদ দিয়ে যাচ্ছে অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে। তাহলে এই পড়ার মহত্ব কি থাকল?

টাইটেল দেখেই বুঝতে পারছেন, এই ব্লগে কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়া-লেখার ব্যাপারে চরম ভাবে নিরুৎসাহিত করা হবে। পুরো ব্লগে কম্পিউটার সায়েন্স কই ধুয়ে দেওয়া হবে। তাই যারা কম্পিউটার সায়েন্স এর ডাই-হার্ট ফ্যান আছেন, এই ব্লগের বাকী অংশ এভয়েড করতে পারেন।

শুরুতে বলি, কম্পিউটার সায়েন্স এর একটা অদ্ভুত ক্যারেক্টার আছে। আপনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার অথবা আপনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার না। এই দুইটা স্টেট এর বাইরে কম্পিউটার সায়েন্স এ আর কিছু নাই। মোটা-মোটি পারেন, কোন রকম পারেন, সেমি প্রফেশনাল এ রকম মাঝা মাঝি কোন পোজিশন বা স্টেট কম্পিউটার সায়েন্স এ নাই।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এ আবার এ রকম কোন স্টেটও নাই। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এ স্টেট সব সময় আনেস্টেবল এবং নির্ভর করছে আপনার উপর। হাহা…

তো, আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্স পড়েন, তাহলে আপনি এই ২টা স্টেট এ পড়বেন। কিন্তু কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার স্টেট এ পড়ার সম্ভাবনা আবার ৫% এ কম সাধারনত।

কেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না?

কম্পিউটার সায়েন্স এ মুল ভিত্তি হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। কম্পিউটার এর সাথে কমিউনিকেশন এর বিকল্প নাই। এটা চরম বিরক্তিকর একটা জিনিস। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করার জন্য ম্যাথ স্কিল লাগে, দিনের পর দিন বিরক্তিকর সমস্যা নিয়ে পরে থাকা লাগে।

অনেকে এর জন্যই ট্রল করে বলে থাকে, এ প্রোগ্রামার হ্যাজ নো লাইফ। মজা করে বলে থাকলেও, এই কথাটি অনেক আংশে সত্য। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে বাদ বাকি সব মেইনটেইন করা অনেক অনেক কঠিন।

যারা বলবেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং অনেক ইন্টারেস্টিং তাদের জ্ঞ্যাতার্থে, প্লিজ নিজের ভালো লাগা অন্যর কাধে চাপাবেন না। আপনি অনেস্ট ভাবে কম্পিউটার সায়েন্স এর সিনিয়র ১০০ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করুন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কেমন তাহলেই আমার কথার সত্যতা পাবেন।

আমি নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, তাই আমাকে আলাদা ভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কেমন বুঝানোর কিছু নাই। আমি এই ব্লগ লিখছি সকলের উদেশ্য, যারা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে শুধু তাদের জন্য না।

যাই হোক, মুল কথায় ফিরে আসি। কম্পিউটার প্রোগ্ররামিং এর মত চরম বিরক্তিকর বিষয় যদি আয়ত্তে না আনতে পারেন, তাহলে আপনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না।

কিছু মানুষ আপনাকে মোটিভেট করবে, কম্পিউটার সায়েন্স মানেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং না, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং না। এর বাইরে অনেক রাস্তা আছে। এমনকি আমি নিজেও এই কথা আপনাদের বলতে পারি। তবে সত্য এটাই যে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বাদে কম্পিউটার সায়েন্স এ যা আছে সেগুলো আরও কঠিন।

হয় আপনাকে পরোক্ষ ভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর হেল্প লাগবে বা আপনার আরও বড় সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। উদাহরন দেই চলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির একটা গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার। এখানে একটা পার্ট হচ্ছে কন্টেন্ট লেখা। এখন আপনি বলেন, একটা প্যারাগ্রাফ কিভাবে সব থেকে ভালো হবে সেটা কিভাবে বিবেচনা করবেন।

আবার ধরেন, মেশিন লার্নিং করবেন। এখানে আপনার লাগবে এডভান্স প্রোগ্রামিং নলেজ এবং সাথে সাথে ম্যাথ, প্রবলেম সলভিং এর দক্ষতা। তাহলে প্রোগ্রামিং ছাড়া আপনি চলবেন কি ভাবে?

যারা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এ প্রোগ্রামিং লাগে না বলে কমেন্ট করার কথা ভাবছেন তাদের বলে রাখি। আপনি কি আন্দাজে নেটওয়ার্কিং এ প্রোগ্রামিং লাগে না ভাবছেন নাকি রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স আছে? আর সিসকো এর মত কোম্পানিতে এদেশের কয়জন ছেলে মেয়ে চাকরি পায়?

তাহলে এবার আপনি বিবেচনা করে দেখুন, আপনি কিন্তু কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ছাড়া চলতে পারছেন না!

কম্পিউটার সাইন্স পড়া বা না পড়ার আরও কয়েকটি কারন-

মারাত্বক প্রতিযোগিতা

আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা যদি সিদ্ধান্থিনতায় ভুগে, তাইলে আসে সিএসই পড়তে। অন্য কোথাও চান্স পাচ্ছে না, সিএসই পড়বে। মেডিকেল এ চান্স পায় নি বা সেকেন্ড টাইম এডমিশন দিবে, তাহলে কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তি হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এমন হয়, বাবা মা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবে, কিছু না ভেবে কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তি করবে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়েরা কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তি হয় শুধু মাত্র একটা ভালো জামাই কেনার আশায়। এর জন্য দেখবেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ সব থেকে বেশি মেয়ে হচ্ছে সিএসই তে। আর ভর্তির কিছুদিন পরেই, মেয়েদের কান্না কাটি শুরু হয়ে যায়, কম্পিউটার ভালো লাগে না, পিসি তে বসে থাকতে পারি না ব্লা ব্লা ব্লা।

গ্রাজুয়েশনের পর আপনার সাথে যুক্ত হবে আইটি, ট্রেইনিং সেন্টার, ডিপ্লমা পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার রা। এর সাথে আছে দুনিয়ার যে কোন সাবজেক্ট থেকে পাশ করে সিএসই লাইনে আসা মানুষ। দেশে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেইনিং সেন্টার গুলো সাধারন মানুষের মধ্য একটা বাজে ধারনার জন্ম দিয়েছে। মানুষ এখন মনে করে যে কেউ চাইলে টেক লাইনে কাজ করতে পারে।

এই সব কারনে টেক লাইন এখন মারাত্বক ক্রাউড। আর এই ক্রাউড আগামী ১-২ যুগে কাটবে কি না কে জানে।

সহয়তা না পাওয়ার সম্ভাবনা

প্রোগ্রামার হতে চান? একাই শেখা লাগবে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যলাওয় গুলোর অবস্থা এতই বাজে যে, সেখানে শিক্ষকরাই প্রোগ্ররামিং পারে না। বলা হয়ে থাকে, যারা প্রোগ্রামিং পারে না, কিন্তু ভালো রেজাল্ট করেছে তারা ইন্ডাস্ট্রি তে কিছু করতে না পেরে শিক্ষকতা শুরু করেছেন।

শুধু প্রোগ্রামিং না, কম্পিউটার সায়েন্স এর তেমন কিছু শেখার ব্যাপারে আপনি কারও থেকে সহয়তা পাবেন না। আপনাকে ৫০-৮০ হাজার টাকা সেমিস্টার ফিস দিয়ে, পরে ইউডেমিতে যেতে হবে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য। পাড়ার গলিতে অনেক ট্রেইনিং সেন্টার দেখবেন, আশে পাশে শত শত বেকার কম্পিউটার সায়েন্স গ্রাজুয়েট দেখবেন কিন্তু সহায়তা কারও থেকে পাবেন না।

কম্পিউটার প্ররোগ্রামিং এর সময় পাবা নাঃ

নিচের অংশটুকু সুবিন ভাই এর ব্লগ থেকে সরাসরি কপি করা হয়েছে। কন্টেন্ট সোর্স এখানে!

আসলে, প্রোগ্রামিংয়ের পেছনে তুমি সময় দিতে পারবা না।

তোমার ভার্সিটির ক্লাস করা লাগে, আর ঢাকায় থাকলে তো আবার রাস্তা-ঘাটেও অনেক সময় ব্যায় হয়। এছাড়া আমরা সামাজিক জীব, বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন আছে। কত রকমের প্রোগ্রামে যাওয়া লাগে।

এদিকে আবার রাতের বেলায় প্রিমিয়ার লীগ, লা লিগা, উয়েফা – কতকিছু। আর ক্রিকেট খেলা তো আছেই – না দেখলে পাপ হয়। তারপরে আছে কত রকমের সিরিয়াল, গেম অব থ্রোনস, হেন-তেন, না দেখলে সমাজে মান থাকে না।

এত কিছুর পরে আবার আছে মোবাইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। আমি তো নোটিফিকেশনের কাছে যাই না, নোটিফিকেশন আমার কাছে আসে! এজন্যই বলি, সময় দিতে পারবা না।

আর পরিশ্রমও করতে পারবা না, সময় দিতে পারলেই না পরিশ্রম করবা। সুতরাং সময় থাকতে নিজের ভালো বুঝে নাও। কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে বেকার থাকার চেয়ে অন্য কিছু কর।

আর কম্পিউটার সায়েন্স কিন্তু অনেক বোঝার বিষয়। যাদের গণিতের সাধারণ বিষয়গুলো বুঝতেই সমস্যা হয়, তাদের আসলে এই দিকে না আসাই ভালো।

এখত এত কিছুর পর, জীবনের মুল্যবনা ৪-৫ বছর সময় নষ্ট করে আপনাকে বেকার থাকা লাগবে। ব্যাংক বা অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করা লাগবে। তাহলে এবার আপনি বলেন, এই ২০২১ সালে এসে কি আপনার কম্পিউটার সাইন্স পড়া উচিৎ?

0Shares
নিরাপদ ফিউচার Previous post নিরাপদ ফিউচার কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমরা মানুষ টা হাড়িয়ে ফেলি!
Next post যে কারনে কোম্পানির গ্রোথ কমে যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ