চিত্র ০১ঃ
জামাল সাহেব কম্পিউটার সায়েন্স থেকে বিএসই পাশ করেছেন, কিন্তু ভাগ্যর ফেরে অন্য যায়গা জব করছেন। তিনি ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ। সুইচ করতে চান সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে, কিন্তু কি করবেন? কোন ল্যাংগুয়েজ শিখবেন বা কোন ফ্রেমওয়ার্ক এ আগাবেন! ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ, কি শিখব আর কিভাবে শিখব?

চিত্র ০২ঃ
জামাল সাহেব গ্রাজুয়েশন করেছেন সিএসই থেকে! গ্রাজুয়েশন চলার সময়ে তার অনেক সমস্যা ছিল। পারিবারিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়ন ছিল। অর্থনিতির সমস্যা মেটাতে তিনি টিউশন করেছেন। এর কারনে তিনি কিছু শিখেন নি! এখন কি করবেন? এই একই রকম অবস্থায়, অনেক ডিপ্লমা পাশ করেছেন। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ, কি শিখব আর কিভাবে শিখব?

চিত্র ০৩ঃ
অনেকে আছেন, ঢাকায় থাকা, রাস্তা-ঘাটের সময় ব্যায়, সোস্যাল মিডিয়ার সময়, এদিকে আবার রাতের বেলায় প্রিমিয়ার লীগ, লা লিগা, উয়েফা – কতকিছু। আর অন্যদিকে ক্রিকেট খেলা তো আছেই – না দেখলে পাপ হয়। তারপরে আছে কত রকমের সিরিয়াল, গেম অব থ্রোনস, হেন-তেন, না দেখলে সমাজে মান থাকে না। এত কিছুর পরে আবার আছে মোবাইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। আমি তো নোটিফিকেশনের কাছে যাই না, নোটিফিকেশন আমার কাছে আসে! এভা বে একদল জামাল সাহেব ভার্সিটির গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলেছেন কিন্তু কিছু শিখেন নাই।

চিত্র ০৪ঃ
জামাল সাহেব একটি সাবজেক্ট থেকে পাশ করেছেন! তিনি শুনেছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর লাইফ অনেক সোজা। শুধু সারা দিন ডেস্ক এ বসে বসে কম্পিউটার টেপা। কি-বোর্ড এ টাইপ যার যত ভালো তার তত বেতন। এখন তিনি তাই, কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়তে চান, কিন্তু হতাশ! কি শিখবেন জানেন না! ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ, কি শিখব আর কিভাবে শিখব?

চিত্র ০৫ঃ
জামাল সাহেব শিক্ষার্থী! তার প্রিয়তমার বিয়ে আসতেছে। এখন পাশ করার পর পর চাকরি না পেলে খুব সমস্যা। সে প্রথম বর্ষ থেকেই চাকরি প্রস্তুতি নিতে চায়। এটা সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার বা ফোর্থ ইয়ার এর জামাল সাহেবও হতে পারেন। পাশ করার পরই তার চাকরি চাই চাই? ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ, কি শিখব আর কিভাবে শিখব?

এখন আপনি যদি এই রকম কোন জামাল সাহেব হয়ে থাকেন বা অন্য কোন জামাল সাহেব হয়ে থাকেন, যিনি চাকরির ব্যাপারে চিন্তিত অনেক। তাহলে আজকের ব্লগ আপনার কাজে লাগতে পারে। ব্লগটি ভালো করে পড়লে আপনার উপকার হবে। আর ব্লগটি শেয়ার দিলে আপনার বন্ধুদের উপকার হবে। শেয়ার দিতে সময় লাগবে কয়েক মিনিট কিন্তু আপনার একটি শেয়ার আমাকে আজীবন উৎসাহ দিবে।

শেখার সিদ্ধান্ত নেয়া

যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে সবার প্রথম কাজ হচ্ছে শেখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি হয়ত অবাক হচ্ছেন, শেখার জন্যই তো এই ব্লগ পড়ছেন, তাহলে আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কি আছে? সামনে আগান, বিস্তারিত বলছি!

আমি জীবনে যাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের সকলের স্বপ্ন আছে জীবনে ভালো কিছু করার। প্রত্যকে চায় জীবনে খুব ভালো একটা চাকরি পেতে বা নিজে অনেক বড় একটা কোম্পানি দিতে। বিদেশে পড়তে যেতে চায় বা গুগোলে চাকরি করতে যেতে চায়। স্বপ্ন নাই বা জীবনে অনেক বড় কিছু করতে চায় না এমন মানুষ পেয়েছি মাত্র ২ জন। এর মধ্য একজন আমার কলিগ আর একজন আমার বন্ধু

সমস্যা হচ্ছে, সাক্সেস কিন্তু শুধু স্বপ্ন বা পরিকল্পনা দিয়ে আসে না। এই কথাটা জানা দূরে থাক, মানুষ তো ভাবেই না। শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন। ট্রাভেল করা আমার স্বপ্ন কিন্তু আমি কোথাও যাই নি। আমি রোদের মধ্য হাটতে পারব না, দূরে জার্নি করতে পারব না। ট্রাভেল কষ্ট বেয়ার করার জন্য আমি নিজে কিছু করতে পারব না।

আবার আমি চিকন হতে চাই কিন্তু আমি খাওয়া কন্ট্রল করতে পারব না। রাতে আমার মিষ্টি না খেলে চলেই না। বার্গার দেখলে আমি লোভ সামলাতে পারি না। কিন্তু আমার ইচ্ছা আমি চিকন হব। এ রকম ভাবে, গুগোলে চাকরি করতে চাই, কিন্তু কোড করতে পারব না। বাইরে পিএইচডি করতে যাব কিন্তু চাকরি করে এসে আবার জিয়ারই বই পড়তে পারব না। আমার প্যারা লাগে।

এখন আপনার মধ্য যদি এই রকম প্ল্যান থাকে, তাইলে কম্পিউটার সায়েন্স এর রাস্তা আপনার জন্য না। ছাইড়া দেন ভাই। এই দিকে মামা-চাচার জোড় চলে না বললেই চলে। আর চাকরি পাইলেও কয়দিন পর হতাশ হয়ে নিজেই নিজেকে কিক-আউট করবেন।

তো, এবার আপনি ভাবুন, সময় দিতে হবে। যে সময় অফিস থেকে অফিস থেকে এসে বেডে গড়া-গড়ি করতেন সেটা কম্পিউটার এর সামনে কাটাতে হবে। যে সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেন, চ্যাটিং করতেন সেটা আপনার লজিক্যাল প্রবলেম সমাধানে ব্যয় করতে হবে। যখন আপনি প্রিয়তমার সাথে আজাইরা কথা বলতেন সে সময় আপনাকে কম্পিউটার এর সাথে কথা বলতে হবে। 

ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, কথা গুলো চিন্তা করে নিজেকে জিজ্ঞাস করুন। মনে রাখুন, চিন্তা, স্বপ্ন বা প্ল্যান দিয়ে সাক্সেস আসে না, আসবেও না। যদি কাজ করতে পারেন তাহলে আসবে। এর পর যদি মনে হয় যে, হ্যা। আপনি চেষ্টা করে দেখবেন, অন্তত ১-২ বছর সফল না হলেও চেষ্টা করে যাবেন, তাহলে আপনাকে স্বাগতম। আপনি স্বফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।

শেখা শুরু করা

সিদ্ধান্ত নিলাম কিন্তু শিখব ক? কোন ল্যাংগুয়েজ এ চাকরি ভালো, ফিউচার ভাল কার? সবাই তো বলে ব্যাসিক শক্ত করতে কিন্তু ব্যাসিকটা কি ভাই? শুরুতেই চিন্তা করে দেখুন যে, আপনার পছন্দের কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আছে নাকি। থাকলে সেটা শুরু করে দিন। মনে রাখবেন, সব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর চাহিদা আছে মার্কেট এ।

আমাদের দেশে সি প্রোগ্রামিং কে কিছুটা অবহেলা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা প্রায় লক্ষ্য করি, সি প্রোগ্রামিং এর চাকরিতে বেতন ১-২ লাখ টাকা। চিন্তা করা যায়, একজন ফ্রেশার সি প্রোগ্রামার এর বেতন ১ লাখ টাকা?

যদি কোন ল্যাংগুয়েজ পরিচিত বা ফেভারিট না থাকে, কোন সমস্যা নেই। শুরুতে দেখে নিন, কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখবেন আর্টিকেলটি। এখানে আমি পরিচিত কিছু ল্যাংগুয়েজ এর ব্যাপারে বেসিক কথা বলেছি। এখান থেকে কিছু ভালো লাগতে পারে। আর যদি এই লিস্ট এ স্যাটিসফাই না হতে পারেন, তাহলে আরেকটা টিপস দিচ্ছি।

যে কোন জব সাইট ব্রাউজ করবেন টানা ১-২ সপ্তাহ। দেখবেন কি কি জব পোস্ট হচ্ছে। সেগুলো ক্যাটাগরি করবেন। আর কি কি কমন স্কিল চায় সেটা নোট করবেন। ডেটা কালেক্ট করে এক্সেল এ চার্ট এ বসিয়ে দিন। এনালাইসিস থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন কোনটা শিখতে হবে।

শেখার সময়ে শুরু থেকে অতিরিক্ত সময় দিবেন না। এতে করে বাউন্স করার সম্ভাবনা থাকে। শিখবেন অল্প সময়, মজা নিয়ে। আর কি কি শিখতে হবে সেটাও জব এনালাইসিস করে জানতে পারবেন। প্রথমে বেসিক দিয়ে শুরু করুন। এর পরও কোন কনফিউশন থাকলে আমি তো আছিই!

প্রজেক্ট বানানো

শুধু বেসিক কোডিং আর প্রব্লেম সলভিং শিখলেই হবে না। যদি আপনি গুগোল বা এ রকম জায়ান্ট কোম্পানিতে চাকরি করতে চান, তাহলে কোডিং, ডেটা স্ট্রাকচার, এলগরিদম, ডিজাইন প্যাটার্ন শিখলে হয়ে যাবে। দেশেও এমন কোম্পানি আছে যারা আপনার কোডিং স্কিল দেখে ইন্টারভিউ এ ডাকতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনলাইন প্রবলেম সলভিং প্লাটফর্ম গুলো আপনাকে সহায়তা করতে পারে।

তবে, যে কোন কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ পেতে প্রজেক্ট অনেক সহায়তা করতে পারে। আর লোকাল কোম্পানি গুলোতে তো প্রজেক্ট মাস্ট। তবে এই সময়ে প্রজেক্ট কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের না। তাই বেসিক কোডিং শেখার পাশা-পাশি প্রজেক্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন ভালো করে। তার পর স্ট্যান্ডার্ড লেভেল এর এক বা একাধিক প্রজেক্ট বানান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে্‌ স্ট্যান্ডার্ড প্রজেক্ট মানে কি? স্ট্যান্ডার্ড প্রজেক্ট হচ্ছে সেই প্রজেক্ট যেটা অন্য মানুষ রা ব্যাবহার করতে পারে এবং করে। যেমন, ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন ডেভেলপার বা থিম ডেভেলপার হলে ওয়ার্ডপ্রেশ অর্গ এ থিম বা প্লাগিন রাখুন। যেটা ফ্রি, মানুষ ব্যাবহার করতে পারে। ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার হলে থিমফরেস্ট এ সাইট টেমপ্লেট দিতে পারেন। মোবাইল এপ হলে প্লেস্টর এ এপ দিন।

সিভি আপডেট এবং ইন্টারভিউ প্রস্তুতি

যখন আপনার হাতে ১-২টা প্রজেক্ট এসে যাবে, তখন সিভি আপডেট করতে হবে। সিভি আপডেট এর ব্যাপার বিস্তারিত বললে অনেক গুলো ব্লগে কাভার করা যাবে না। শুধু বলব ট্রেডিশনাল সিভি থেকে বেড়িয়ে আসুন। টেক সিভি কেমন হয় এ ব্যাপারে গুগোলে অনেক অনেক তথ্য পাবেন।

এর সাথে সাথে আপনি ক্যারিয়ার পোর্টাল এর ওয়েব সাইট, ফেজবুক পেইজ বা ইউটুবে দেখতে পারেন। সিভিতে কমন মিস্টেক গুলো জেনে সেগুলো ঠিক করে ফেলুন। সিভির সাথে সাথে কাভার লেটার রেডি করে ফেলুন। একটা মেজর ক্যাটাগরির সাথে অন্য ক্যাটাগরির সিভিও আপডেট করে বা কাস্টম বানিয়ে নিতে পারেন।

এর পর আসেন প্রস্তুতি নিয়ে। আমাদের দেশে অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা ভালো প্রস্তুতির অভাবে চাকরি পায় না। শুধু মাত্র আপনার স্কিল দিয়ে চাকরি পাবেন এমন ভাবা ঠিক নয়। ইন্টারভিউ এর সঠিক প্রস্তুতি আপনাকে চাকরি পেতে অনেক সহায়তা করতে পারে।

শেষ কথা

জামাল সাহেব আমাকে নক দিয়ে বলেন, ভাই ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ। কি করব? আমি এই ব্লগ এর লিংক দিলাম। বললাম, সময় দেন ৬ মাস, সব কিছু আপডেট করে জানাবেন। আমার অফিসে বসের সাথে কথা বলে জানাব। তিনি চলে গেলেন, আমি প্রায় ভুলেই গেছি উনার কথা। ১ বছর পর এসে আবার একই কথা, ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ। কি করব ভাই?

লাইফে যে কোন সময়ে সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে রিস্ক নিতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। যদি না পারেন তাহলে শুধু এরে ওরে বলেই যাবেন। কাজের কাজ কিছু হবে না। শুরু করে দিন আজই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close