আসিফ জামিল ভাই এবং আমি একই হাউজ এ চাকরি করি। Asif Jamil ভাই বর্তমানে কাজ করছেন XpeedStudio তে, Digital Marketing Strategist হিসেবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, Asif Jamil ভাইয়া এবং আমি একই কলেজ থেকে (নটর ডেম কলেজ, ঢাকা) এইচএসসি পাস করেছিলাম। যদিও আমাদের পরিচয় হয়েছে চাকরির সুত্রে।
Asif Jamil ভাই এর নিজের ওয়েব সাইট www.asif-jamil.com। যারা মার্কেটিং, কপিরাইটিং, ব্র্যান্ডিং এর মত টপিক নিয়ে আগ্রহী তারা দেখতে পারেন। মজার ব্যাপার হল, আমি নিজেও আসিফ ভাই এর ব্লগ পড়ে থাকি।
শুরুতেই জানতে চাই, কেমন আছেন আপনি? আর বর্তমানে পোস্ট-প্যান্ডমিক জীবন কেমন যাচ্ছে?
👉 প্যান্ডেমিকের সময়টা একটা ঘোরলাগা সন্ধ্যার মতো ছিলো, তাই পোস্ট-প্যান্ডেমিক জীবনযাপনে এখনো একটা সুন্দর সকালের অপেক্ষায় আছি। আশা করি তার দেখা মিলবে শীঘ্রই।
আপনার সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন?
👉 এটা এমন একটা যার উত্তরে প্রথমে ইতি-উতি ভাবি যে আদৌ কিছু আছে কি না বলার, আবার বলা শুরু করলে বেগ পেতে হয় লাগাম টেনে ধরতে।
আমি এম. আসিফ জামিল, আমৃত্যু আমার প্রথম পরিচয় আমি একজন স্টোরিটেলার — সেটা যে মাধ্যমেই হোক না কেন। পড়াশুনার পাট চুকিয়েছি (আপাতত) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, গণিতে। সেখানে চোখ ফিল্ম সোসাইটি নামক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
কর্মজীবনে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িত আছি। বর্তমানে কর্মরত আছি এক্সপিডস্টুডিওতে, ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে। কপিরাইটিং ও ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং আমার অন্যতম প্যাশনের জায়গা। এছাড়া পড়াশুনার সুবাদেই কি না জানি না, ডেটা আর নাম্বার এর প্রতি তীব্র ঝোঁক। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও আমি ডেটা-ড্রিভেন মার্কেটিং এবং এফেক্টিভ মার্কেটিং কম্যুনিকেশনে বিশ্বাসী।
এইতো!
সারা দিনের কাজের শিডিউল এবং সেগুলো এক্সিকিউশন করেন কিভাবে?
👉 উইকডে গুলোতে সকাল-বিকাল অফিস, আর অফিসের পর নিজস্ব কাজ/অফিসের বাইরের সার্ভিস ঘরানার কাজ/বন্ধুদের সময় দেয়া। উইকেন্ডে একটু রিল্যাক্স করার চেষ্টা করি — হোক সেটা সিনেমা-গানে ডুবে থাকা কিংবা এদিক সেদিক ঢুঁ মেরে আসা।
আপনার দৈনিক ঘুমানোর সময়সূচি কেমন?
👉 ঘুমের ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই নিজেকে অভিযোজিত করার চেষ্টা করি। যেমন, বর্তমানে আমার অফিসের সময় ৮ টায় হওয়ায় আমি আনুমানিক রাত ১টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত ঘুমাই। অফিসের সময় আর অন্যান্য কাজের চাহিদা অনুযায়ী এর রকমফের হয় ঠিকই, তবে উইকডে তে ৬ ঘন্টার বেশি আমি কখনোই ঘুমাই না। উইকেন্ডে সেটা বেড়ে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত যায় মাঝে-সাঝে।
আসিফ ভাই, আপনি Staff Asia তে ছিলেন, এখন Xpeedstudio তে আছেন! চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মুল বাধা কি মনে করেন?
👉 চাকরিজীবনে আশেপাশের মানুষদের দেখে এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকার সুবাদে লব্ধজ্ঞান থেকে আমার মনে হয় মূলতঃ দুটি বিষয় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল বাধা হিসেবে কাজ করে:
১. স্কিল/দক্ষতার অভাব
২. স্কিলকে ঠিকঠাকভাবে তুলে ধরতে না পারা
এই দুটো বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারলে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, কবে পাশ করেছেন, কি বিষয়ে পড়েছেন, ইত্যাদি গৌণ হয়ে যায়।
মার্কেটারদের সাথে ডেভেলপারদের এবং ডিজাইনারদের কেমন সম্পর্ক থাকা উচিৎ বলে আপনার মনে হয়?
👉 যেহেতু ডিজাইনার এবং ডেভেলপারদের কথা বলা হচ্ছে, তাহলে মূলতঃ প্রোডাক্ট-নির্ভর কোম্পানির কথাই বলা হচ্ছে । যেহেতু সব সার্ভিস বেজড কোম্পানি এই দুইটি রোল একসাথে দেখা যায় না। তবে যে ধরনের সলিউশনই হোক না কেন, মার্কেটার, ডেভেলপার, আর ডিজাইনার — সবাইকেই একথা স্বীকার করতে হবে কাজের ধরনে ভিন্নতা থাকলেও তারা আসলে একই ছাতার তলে একই গোল সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। একের সাহায্য ছাড়া অপরজনের কাজ ঠিকঠাকভাবে করাটাও দুঃসাধ্য।
মার্কেটার, ডেভেলপার, আর ডিজাইনার — সবাইকেই একথা স্বীকার করতে হবে কাজের ধরনে ভিন্নতা থাকলেও তারা আসলে একই ছাতার তলে একই গোল সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। একের সাহায্য ছাড়া অপরজনের কাজ ঠিকঠাকভাবে করাটাও দুঃসাধ্য।
তাই এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে সবার মিলেমিশে কাজ করা উচিত। এতে যেমন কোম্পানির উত্তরোত্তর সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে, সেইসাথে ব্যক্তিগত উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়।
ইউনিভার্সিটি এবং জব লাইফ এর মধ্য পার্থক্য কি?
👉 ইউনিভার্সিটি জীবন আর পেশাগত জীবন — দুইক্ষেত্রেই আপনি অনেক মানুষের সাথে মেশেন, জ্ঞানার্জন করেন, আর অভিজ্ঞতা লাভ করেন। দুয়ের মধ্যে আমি খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও একটি বিষয়ে অমিল অবশ্যই আছে, ইউনিভার্সিটিতে আপনি শুধুই শিখে যান। অপরদিকে ওয়ার্কপ্লেসে আপনি ইউনিভার্সিটি থেকে শেখা (এবং অন্যান্য মাধ্যমে শেখা) বিষয়গুলো প্রয়োগ করেন।
এছাড়াও জব করলে বেতন পাওয়া যায়, ইউনিভার্সিটিতে তা পাওয়া যায় না 😅
কবে কখন কিভাবে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এ আসেন?
👉 এই গল্পটা খুবই কাকতালীয় এবং মজার। অল্প কথায় বললে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে কন্টেন্ট রাইটিং ও ভিডিও তৈরির সাথে জড়িত ছিলাম। সেশন জটে আটকে থাকা অবস্থায়ই সিলেটে স্টাফ এশিয়া নামক একটি বিপিও-তে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে এ্যাপ্লাই করি ও ডাক পাই। পরবর্তীতে এ্যাসেসমেন্ট ও ইন্টারভিউ পর্বে ঠিকঠাকভাবে উতরে যাওয়ার পর আমাকে মার্কেটিং লীড পজিশনে নিযুক্ত করা হয়, যা ছিলো সেখানের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি গোছের রোল। আমাদের এক মাসের ইন্টেন্সিভ একটি বুটক্যাম্পের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এবং সেখানেই আমার মার্কেটিং এর হাতেখড়ি। তবে এক্ষেত্রে আমার লেখালেখির টুকটাক পূর্ব অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।
এরপর কালের পরিক্রমায় এক থেকে একাধিক ব্র্যান্ডের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পাই এবং বছরের চাকা ঘোরার আগেই সেলস ও মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একজন টিম লিডার হিসেবে পদোন্নতি পাই৷
এই হলো আমার ভাগ্যক্রমে রাইটিং থেকে মার্কেটিং এ আসা এবং পরবর্তীতে মার্কেটিং এর প্রেমে পড়ে সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের প্রথম কিস্তি।
আপনি তো গনিত নিয়ে পড়েছেন দেশের সেরা ভার্সিটি তে। সেখান থেকে মার্কেটিং এ কিভাবে আসলেন?
👉 কিভাবে মার্কেটিং এ আসলাম, সেটা তো ইতোমধ্যে বলেই ফেলেছি। তবে দেশবরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে পড়াটাও আমার জন্য একরকম আশীর্বাদই ছিলো। গণিতে পড়তে গিয়ে এই আত্মউপলব্ধিটা এসেছিলো যে গণিতের ব্যাপারে আমি মোটেও প্যাশনেট না, এখানে আমি আমার জন্য কোনো সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দেখি না, এবং আমি এমন কিছু করতে চাই যেখানে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগানো যাবে।
এই সব বিষয় ভেবেচিন্তে আমি আমার মেজরের বাইরে গিয়ে এবং ক্যারিয়ার ট্র্যাক পরিবর্তন করে মার্কেটিং এ আসার যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম, সেটি আমার জীবনের অন্যতম বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত ছিলো। এরকম রিস্ক হয়তো সবাইকে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ফেলতে বলবো না, তবে চাইলেই যে নেয়া সম্ভব তার উদাহরণ আমি নিজেই।
কোথায় থেকে আপনি প্রতিদিন কাজ করার উৎসাহ পান? (নিজেকে মোটিভেটেড রাখেন কীভাবে?)
👉 শুনতে ক্লিশে মনে হলেও, আমার কাজের পেছনে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হলো to be a better version of myself than yesterday. আজকে আমি কিছু শিখবো, নতুন করে জানবো, অন্যকে জানাবো, এবং যে ভুলগুলো করবো, সেগুলোই আমাকে কালকের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলবো এবং সামনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।
ডিভাইস ছাড়াও সব সময় সাথে থাকে এমন কিছুর নাম বলুন?
👉 ব্যাগ, যে এক্সেসরিটি ছাড়া কাঁধ খালি খালি লাগে, হাঁটতে গেলে এক ধরনের অপূর্ণতা বোধ করি। বৃষ্টির মৌসুম ছাড়া বাকি সময় ব্যাগে বই রাখার চেষ্টা করি, স্ক্রিনটাইম কমিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে।
আপনার জীবনের টাইম সেভিং শর্টকাট অথবা লাইফ হ্যাক কি?
👉 এটাকে শর্টকাট বলা চলে কি না জানি না, তবে টাইম সেভ করার জন্য জীবনে ডিস্ট্র্যাকশন কমিয়ে আনা আমার কাছে সবচেয়ে কার্যকরী মনে হয়।
আর যে লাইফ হ্যাকটি আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি, সেটা হলো কখনো কোনো সুযোগ ফিরিয়ে না দেয়া, হেলায় নষ্ট না করা। “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শূন্য থাক”।
যদি ভবিষ্যৎ কোন স্বপ্ন বা ইচ্ছা থেকে থাকে তবে সেটি কী নিয়ে?
👉 ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার মূল স্বপ্ন একটাই — আর্লি রিটায়ারমেন্ট। এর বাইরে আরো অনেক স্বপ্ন/দিবাস্বপ্ন আছে, সেগুলোর স্পয়লার আগেভাগে দিতে চাচ্ছি না 😅
কাজ করার সময় আপনি কোন ধরনের গান শুনতে পছন্দ করেন?
👉 শুধু কাজের সময় না, যেকোনো সময়ই আমার গানের প্লেলিস্ট স্থান-কাল-মেজাজ ভেদে পরিবর্তিত হয়। ক্লাসিক রক থেকে সলীল চৌধুরী, ব্লুজ থেকে ফোক, কিছুই বাদ পড়ে না তালিকা থেকে।
তবে হ্যাঁ, গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় ইদানিং মান্না দে আর শ্যামল মিত্রদের শুনছি। কতদিন শুনবো সেটা অনিশ্চিত।
রাগ হলে কি করেন বা কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রন করেন?
👉 এই প্রশ্নের একটা যুতসই উত্তর আমি নিজেও খুঁজছি। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য যা করি তাতে রাগকে ধামাচাপা দেয়া হয় স্রেফ। সেই ধামাচাপা দেয়ার জন্য সচরাচর গান শুনি অথবা স্ট্যান্ডাপ কমেডি স্পেশালগুলো খুলে বসি।
দিনের ঠিক কোন সময়ে আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন?
👉 ভোর থেকে লাঞ্চের আগ পর্যন্ত, আর এরপর সন্ধ্যা থেকে ডিনারের আগ পর্যন্ত। এর আগে-পরে রিক্রিয়েশনাল কিছু করে মনকে বশে আনি।
নিজেকে আপনি অন্যদের থেকে কীভাবে আলাদা করবেন?
👉 নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা সাব্যস্ত করতে গিয়ে লোকে সাধারণত আত্ম-অহমিকা ও হাইপারইন্ডিভিজ্যুয়ালিজমের শরণাপন্ন হয় বলে দেখেছি।
আমি মনে করি, জীবনে প্রত্যেকের জার্নিটা তার নিজস্ব, যার তুলনা অন্য কারো সাথে হয় না। সেই জার্নিটাই আমাকে আলাদা করে, আর কিছু না।
তিনটা বই এবং চলচিত্র নাম আপনি মনে করেন সবার পড়া এবং দেখা উচিত?
👉 বই তো অনেকই আছে, কোনটা রেখে কোনটা পড়তে বলবো ভেবে বেগ পেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে মাথায় এই নামগুলো আসলো —
- Start With Why – Simon Sinek
- The Old Man and The Sea – Ernest Hemingway
- On The Shortness of Life – Seneca
চলচ্চিত্র আমার কাছে খুবই পারসোনাল একটি আর্টফর্ম, পছন্দগুলোও একান্ত ব্যক্তিগত। র্যান্ডমলি বাছাই করে যদি তার মধ্যে তিনটির নাম বলি, সেগুলো হলো —
- Ship of Theseus
- Anomalisa
- The Tree of Life
উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রগুলো মোটেই ব্যবসা/মার্কেটিং/ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক না।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনি ফলো করেন এমন কারও নাম?
👉 আমার একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিনিয়ত যেকোনো পরিস্থিতি থেকে শেখার ও জানার চেষ্টা করি — স্থান-কাল-পাত্র এক্ষেত্রে গৌণ। তবে কিছু মানুষকে এই জানার ও মানার লিস্টে অগ্রাধিকার দেই।
✔️ মার্কেটিং ও সাইকোলজিতে সাইমন সিনেক ও সেথ গোডিন
✔️ কপিরাইটিং এ ড্রেটন বার্ড ও এডি শ্লেয়নার
✔️ এসইও তে ব্রায়ান ডীন, কেভিন ইনডিগ, এবং ফেরি কাযোনি
✔️ বাংলাদেশের মার্কেটিং জগতে গালিব বিন মোহাম্মদ ও প্রলয় হাসান
[Admin Note- গালিব বিন মোহাম্মদ নামে একজন লেখক আছেন যিনি মার্কেটিং এর ইফেকটিভ বই লিখেছেন। এই নামের সাথে ব্লগের এর গালিব এর কোন সম্পর্ক নেই। দুই জন দুই ব্যাক্তি! ]
কোন মার্কেটিং টুলস বা সফটওয়্যার ছাড়া আপনার চলা প্রায় অসম্ভব এবং কেন?
👉 সত্যি কথা বলতে, কোনো মার্কেটিং টুল বা এ্যাপের উপরই আমি এতটা নির্ভরশীল না যে সেটি ছাড়া আমি একেবারেই চলতে পারবো না। এর কারণ হলো, যখনই কোনো মার্কেটিং অপারেশন বা অন্যান্য কাজের খাতিরে কোনো টুল ব্যবহার করতে শিখেছি, চেষ্টা করেছি বেসিক প্রিন্সিপলগুলো শিখে নিতে যেন তার অল্টারনেটিভ যেকোনো টুল দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারি। এতে টুলের উপর নির্ভরযোগ্যতা কমে, এবং কোনো টুলের অনুপস্থিতি/অকার্যকারিতায় হতাশ হওয়া লাগে না।
তবে একটি টুলের কথা না বললেই নয়, যদিও সেটি সরাসরি মার্কেটিং টুল না, সেটি হলো ক্যানভা। টুকটাক ডিজাইনের জন্য এরচেয়ে ইউজার-ফ্রেন্ডলি টুল আর হয় না। এর বাইরে কন্টেন্ট শিডিউলিং, সিআরএম, ইমেইল মার্কেটিং, কীওয়ার্ড রিসার্চ, ইত্যাদি সব প্রয়োজনেই বিকল্প টুল ব্যবহার করেছি এবং সামনেও করতে পারবো।
প্রতিদিনের টু-ডু লিস্ট তৈরি করার জন্য কোন সফটওয়্যার/পন্থাটি আপনার কাছে সেরা মনে হয়?
👉 দৈনন্দিন টু-ডু লিস্ট আমার মাথায় থাকে, সেইসাথে তাগিদটাও থাকে লিস্টের আইটেমগুলো একে একে ক্রস করার। আর কেউ যদি টুলের উপর নির্ভর করতে চায়, তাহলে সব ফোনে/পিসিতে এখন ডিফল্ট নোট/টু-ডু লিস্ট এ্যাপ্লিকেশন থাকে, সেটাই এনাফ।
মোদ্দা কথা, আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই যে আপনার নিজের ভেতরে কাজ শেষ করার এবং সেটি সময়মতো করার তাড়না থাকলে টুল/সিস্টেম ব্যবহার করে টু-ডু লিস্ট তৈরি করা বাহুল্যমাত্র।
আপনি যানজটের সময়টাকে সদ্ব্যবহার করার জন্য কী করেন?
👉 যানজটের সদ্ব্যবহার করি বই/ইবুক পড়ে, ব্লগ/নিউজলেটার পড়ে, লিংকডইন ব্রাউজ করে। এর বাইরে টেক্সটিং বা মাইন্ডলেস ব্রাউজিং যথাসম্ভব কম করার চেষ্টা করি, তবে করি না বললে মিথ্যা বলা হবে।
আপনি যখন কোন স্ট্র্যাটেজিতে মনস্থির করেন তখন কিভাবে শুরু করেন?
👉 যখন আমি মনস্থির করে ফেলেছি, তখন নিশ্চয়ই আমি বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করেই ফেলেছি। তো সেটি কাজে লাগানোর সময় আমি (ইন আইডিয়াল কেস) একটি রোডম্যাপ ধরে আগাই। একটি নতুন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নামতে হলে বিভিন্ন ফ্যাক্টর মাথায় রাখতে হয়, যেমন: রিসোর্স (হিউম্যান/টেকনিকাল), টাইমলাইন, রিস্ক ফ্যাক্টর, কন্টিঞ্জেন্সি প্ল্যান, চলমান কাজে যেন ব্যাঘাত না হয়, ডকুমেন্টেড ইমপ্লিমেন্টেশন, ইত্যাদি। এগুলোকে মাথায় রেখে একটি খসড়া রোডম্যাপ ধরে স্ট্র্যাটেজি ইমপ্লিমেন্টেশনে হাত দেয়ার চেষ্টা করি, যদিও পরিস্থিতিভেদে কখনো কখনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তও নিতে হয়। তবে স্ট্র্যাটেজি ইমপ্লিমেন্টেশনে প্ল্যানিং ও ডকুমেন্টেশনের বিকল্প নেই।
ইউনিভার্সিটি এর পড়া শেষ কিন্তু কোন স্কিলস নেই, তাদের জন্য কি পড়ামর্শ দিবেন?
👉 উত্তরটা খুবই অবভিয়াস। একবিংশ শতাব্দীতে এই ব্যাপারটা স্বীকার করে নিতে হবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য স্কিলের গুরুত্ব আপনার ইন্সটিটিউশনের নামধাম কিংবা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি।
তাই যাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ, বা শেষবর্ষে আছেন, এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। আগে ঠিক করুন আপনি আপনার ক্যারিয়ারের ট্রাজেক্টরিটা কোন দিকে নিবেন এবং সেটা করতে গেলে কোন কোন স্কিল আপনার লাগবে৷ প্রয়োজনবোধে এক্সপেরিমেন্টও করতে পারেন নিজের প্যাশনের জায়গা খুঁজে বের করার জন্য।
আর স্কিল অর্জনের জন্য হাজারো ফ্রি-পেইড রিসোর্স ইন্টারনেটে ছড়ানো ছিটানো আছে, রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগও। আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট যেকোনো স্কিল রপ্ত করার জন্য।
আমাদের দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিশ্বত কেমন বলে, আপনি মনে করেন?
👉 শুধু দেশে কিংবা ভবিষ্যতে নয়, বর্তমানেও মার্কেটিং আর ডিজিটাল মার্কেটিং অনেকটাই সমার্থক হয়ে গেছে — হোক সেটা দেশে কিংবা বিদেশে। আমরা প্রযুক্তিগতভাবে যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই ডিজিটাল মার্কেটিং এ বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সম্ভাবনা বাড়ছে। এই দূরত্ব সামনে আরো ঘুচবে, বাংলাদেশেও
আপনার কাছে গুণীজনদের কাছ থেকে পাওয়া এখন পর্যন্ত সেরা উপদেশ কোনটি মনে হয়েছে?
👉 উপদেশ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, যদি না তার পেছনের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কারভাবে বোধগম্য হয়। ঠিক একই কারণে উপদেশ খুব একটা মনে রাখারও চেষ্টা করি না।
বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে ফেরত যেতে পারলে কোন কাজটি করতেন আর কোন কাজটি করতেন না?
👉 বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফেরত যেতে পারলে দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরিতে আরো সময় দিতাম। যে কাজটা করতাম না সেটা হচ্ছে টিউশন, সেই সময়টা নিজের একটা সাস্টেইনেবল স্কিল ডেভেলপমেন্টে ব্যয় করতাম।
যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতে নিজের কাজ করার মন মানসিকতা ঠিক রাখার জন্য আপনি কী করেন?
👉 কাজের ফলাফলে মনোযোগ দেই। কাজটি আমার অন্ন যোগাচ্ছে, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এ সহায়তা করছে, দক্ষতা বাড়াচ্ছে — এরকম ফলাফল মাথায় আসলে কোনো পরিস্থিতিই আর জটিল মনে হয় না। জীবনের ক্রূর বাস্তবতার কাছে পরিস্থিতির জটিলতা বা আবেগ-অনুভূতি এগুলো ঠুনকো মনে করাটা তখন টনিকের মতো কাজে দেয়।
যারা এখন লেখা-পড়া করছে এবং মার্কেটার হতে চায়, তাদের জন্য কি পরামর্শ দিবেন?
👉 গণউপদেশ বা গণপরামর্শ দিতে-নিতে কখনোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না, কারণ সেটি সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য হয় না। তবে যারা সামনে মার্কেটিং এর জগতে আসতে চায়, তাদের জন্য আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিমত ও উপলব্ধি তুলে ধরছি —
১. মার্কেটিং করতে এবং শিখতে চাইলে শুধুমাত্র কাঠখোট্টা পুঁথিগত বিদ্যা যথেষ্ট নয়, অন্য অনেক বিষয়ে দখল থাকা চাই যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা এবং মনস্তত্ত্ব।
২. সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করতে হবে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও মার্কেটিং এ যা করা হতো এবং যা শেখা হতো বর্তমানে তার অনেক কিছুই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। যুগের সাথে তাল মিলাতে না পারলে মার্কেটিং এ টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
৩. ডিজিটাল লিটারেসিতে মন দিতে হবে। মার্কেটিং এখন অনেকাংশেই ডিজিটাল মার্কেটিং, সামনের দিনগুলোতেও এ ধারা বজায় থাকবে। ডিজিটালি অদক্ষ হলে সামনের দিনগুলোতে মার্কেটিং করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হবে এটা এখনই বলে দেয়া যায়।
৪. ডেটা পড়তে ও বুঝতে জানতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন মার্কেটিং হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এর সাথে তাল মিলাতে না পারলে পিছিয়ে যেতে হবে।
আপনার মোবাইল এবং কম্পিউটার ছাড়া এমন কী ডিভাইস ব্যাবহার করেন যেটা ছাড়া আপনি থাকতে পারবেন না?
👉 না, এমন আর কোনো ডিভাইস ব্যবহার করি না। যোগাযোগের দরকার না পড়লে অথবা বই হাতে থাকলে উপরোক্ত ডিভাইসগুলো ছাড়াও থাকতে পারবো। হয়তো অভ্যেসের কারণে মানিয়ে নিতে একটু বেগ পেতে হবে, কিন্তু পারবো অবশ্যই।
আপনার ব্যাপারে একটা সিক্রেট বলুন যেটা অন্যরা জানে না!
👉 আমি আমার লাইফ নিয়ে যথেষ্ট ওপেন হওয়ায় যেকেউ আমার ব্যাপারে একটু ঘাটাঘাটি করলেই যেকোনো তথ্য বের করে ফেলতে পারবে। তাই এরকম সিক্রেট খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে যেটা কেউ আসলেই আমার ব্যাপারে জানতে চাইবে।
একটা সিক্রেট এই মুহূর্তে মাথায় আসছে — একসময় ড্রামিং এর প্রতি বেশ ঝোঁক ছিলো এবং দুয়েকটা ক্লাসেও গিয়েছিলাম শেখার জন্য। কিন্তু নানান ব্যস্ততায় সেটা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
গালিব নোটস এর পাঠকদের জন্য কিছু বলুন!
👉 গালিব নোটস এর পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের জন্য আমার শুভ কামনা রইলো। আপনাদের যে কোনো ভালো উদ্যোগ শুভ হোক, আমাদের সবার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে নতুন করে চিনুক পুরো পৃথিবী!
******************
Asif Jamil ভাই এর সাক্ষাৎকারটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি চাইলে আইবস এর ইউআই ডিজাইনার ইশরাত জাহান বা স্কুল শিক্ষিকা সুমাইয়া ইসমাইল এর সাক্ষাৎকার গুলো দেখতে পারেন। আর সাক্ষাৎকার ক্যাটাগরির সকল পোস্ট দেখুন এখানে!
- সাক্ষাৎকার এর সিরিজে আমরা ফিচারড করেছি যারা ইউনিভার্সিটি থেকে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেছেন। ফ্রেশ ব্লাড যারা রিসেন্ট ট্রেন্ড জানে, যারা আপডেটেড তথ্য জানে!
আপনি নিজে বা আপনার পরিচিত কারও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে চাইলে, আমাকে নক করতে পারেন সোস্যাল মিডিয়াতে। মুল উদ্যেশ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানানো। তাদের কে ইন্ডাস্ট্রি এর ব্যাপারে সহায়তা করা।