যদি আপনি ঢাকা শহরে একটি ঢিল ছুড়ে মারেন, সেটা হয় বিবিএ স্টুডেন্ট এর গায়ে পড়বে অথবা কম্পিউটার সাইন্স স্টুডেন্ট এর গায়ে পড়বে। আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি ট্রল। আবার, বাংলাদেশে তত গুলো কম্পিউটার নেই যত গুলো কম্পিউটার সাইন্স শিক্ষার্থী আছে। এ রকম ট্রল প্রায় ই দেখা যায়। অনেকের সাথে আমার কথা হয় এবং আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, “কম্পিউটার সাইন্স কি & কেন পড়তে আসছ?”

বেশি ভাগ শিক্ষার্থী উত্তর দেয়, কম্পিউটার সাইন্স পড়া তাদের কাছে একটি শখের বিষয়! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়া কি আসলেই শখের বস্তু? এটা কি ট্রেন্ডিং এ গা ভাসিয়ে ভর্তি হওয়া নাকী নিজেই নিজের ক্ষতি করছেন?

কম্পিউটার সাইন্স কি শুধুই শখের সাবজেক্ট ? – গালিব নোটস

প্রথমত, কম্পিউটার সাইন্স হচ্ছে অনেক বেশী ক্রিয়েটিভ একটি সাবজেক্ট কোন সন্দেহ ছাড়াই। যারা ভালো প্রোগ্রামার তাদের জন্য কম্পিউটার সাইন্স এর ভবিশ্বত অনেক বেশী ভালো হবে। ৪র্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন এর বেশির ভাগ অংশ নির্ভর করছে, কম্পিটার বিজ্ঞানীদের কাজের উপর।


৪র্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশনে অংশ নিতে পারলেতো বিজয়ী হলেন কিন্তু যদি নাপারেন তাহলে ছিটকে পড়বেন।

যেমন ধরেন,আমাদের মধ্য অনেকেই মেশিন লার্নিং শিখতে চায় । কারন মেশিন লার্নিং এখন ট্রেন্ডিং, প্রেস্টিজ ইস্যু। এর মার্কেট ডিমান্ড অনেক বেশী। এখন, যারা মেশিন লার্নিং শিখতে পারল, তাদের জন্য ডিমান্ডেড জব আছে বা তারা হয়ত পেয়েও যাবে। কিন্ত যারা মেশিন লার্নিং শিখতেই পারল না, তাদের কি হবে? তারা তো বেকার ই থাকবে।

আপনি যদি বেকার থাকেন, তাহলে এই দায় ভার টা কার? অবশ্যই আপনার নিজের। বেকারত্বের জন্য ভার্সিটি, বন্ধু, গার্লফ্রেন্ড কেউ দায়ী নয়। নিজের বেকারত্বের জন্য নিজেই দায়ী।

মেশিন লার্নিং নিয়ে কথা না বলা ফ্রেন্ডদের ইমিডিয়েটলি বদলে ফেলুন!

যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে নিজেই চেক করে দেখতে পারেন, কম্পিউটার সাইন্স এ আপনার প্যাশন আছে নাকী ট্রেন্ডিং এ গা ভাসিয়ে কম্পিউটার সাইন্স সাবজেক্ট এ ভর্তী হয়েছেন?

পরিক্ষা করার জন্য সবার শুরুতে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, কম্পিউটার এর সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে ভালো লাগে কি লাগে না?

তার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ম্যাথমেটিক্যাল বিষয় গুলো কি বুঝতে পারেন নাকি পারেন না?

তার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, কোন একটি সমস্যা সমাধানের জন্য, সেটা নিয়ে লম্বা সময় লেগে থাকতে ভালো লাগে নাকি লাগে না?

যদি এই প্রশ্ন গুলোর মধ্য এক বা একাধিক উত্তর না হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন, কম্পিউটার সাইন্স এ আপনার কোন প্যাশন নেই, ডেডিকেশন নেই। শুধু মাত্র ট্রেন্ডিং এ গা ভাসিয়ে, কম্পিউটার সাইন্স পড়তে আসছেন।

যদি আপনি ট্রেন্ডিং এ গা ভাসিয়ে, কম্পিউটার সাইন্স পড়তে আসেন তাহলে নিচের ব্যাড নিউজ গুলো আপনার জন্য।

যে ১৫টি কারনে আইইউবিএটি সিএসই ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হওয়া উচিৎ

প্রথম ব্যাড নিউজ হচ্ছে, পুরো চার বছর এমন একটি সাবজেক্ট পড়া লাগবে যেটি মারাত্বক বিদঘুটে লাগবে, মুখুস্ত করা যায় না আবার না করে উপায় থাকে না। বোনাস হিসাবে ৫,৬ বা ৭ বছর পড়া লাগতে পারে এই সাবজেক্ট। এই সাবজেক্ট এ আপনার কোন ভবিশ্বত নেই।

অনার্স লাইফ চার বছরের হলেও, যেহেতু শখ করে এই সাবজেক্ট পড়তে আসছেন বা ট্রেন্ডস এ ভর্তি হয়েছেন তাই স্বাভাবিক ভাবেই অনেক গুলো সাবজেক্ট এ রিটেক আসার সম্ভাবনা আছে। প্রোগ্রামিং রিলেটেড সাবজেক্ট গুলো ইনজয় করবেন না, সেগুলো খুবই খারাপ রেজাল্ট আসবে। সব মিলিয়ে গ্রাজুয়েশন লাইফ ৫,৬এমন কি ৭ বছরও লাগতে পারে।

২য় ব্যাড নিউজ হচ্ছে, কম্পিউটার সাইন্স সাবজেক্ট এ গ্রাজুয়েট হওয়ার পর শিক্ষিতে বেকার এর দল ভারী করবেন। কিভাবে একটু ব্যাখ্যা করছি। যেহেতু কম্পিউটার সাইন্স আপনি পছন্দ করেন না, তাই পাশ করার পর তেমন স্কিল থাকবে না। কিন্তু কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, এখানে স্কিল ই সব কিছু।

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

যদি আপনার স্কিল থাকে তাহলে আপনি হিরো আর না থাকলে জিরো। অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি যেমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাড়ী বানানোর আগে সব ইকুয়েপমেন্ট এর পেমেন্ট করা লাগে। আবার ইলেক্ট্রিক ইন্ডাস্ট্রিও তেমন। কিন্তু সিএসই তে ডেভেলপমেন্ট, হ্যান্ড অভার আগে, পেমেন্ট পরে।

এর জন্যই এখানে স্কিল ফার্স্ট। এখনে লাম-সাম বুঝ দিয়ে চাকরী করতে পারবেন না। এবং ফাইনালি, বেকার এর দল ভারি করবেন।


৩য় ব্যাড নিউজ হচ্ছে, গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ফেইল করতে পারেন। আপনি বাউন্স করতে পারেন। আমি এ রকম অনেক ছেলে মেয়ে কে চিনি যারা কম্পিউটার সাইন্স এ ভর্তি হওয়ার ১,২,৩ এমনকি ৩.৫ ইয়ার পর বাউন্স করেছে। কারন তারা কম্পিউটার সাইন্স বুঝে না, প্রোগ্রামিং এনজয় করে না।

আর, কিছু না জেনে বের হয়ে তো আর কম্পিউটার সাইন্স কি রিলেটেড জব করতে পারছেন না। বেকার হন বা অন্য লাইন এ জান, কম্পিউটার সাইন্স কি থেকে তো বাউন্স ই করছেন।

বেসরকারী ভার্সিটিতে ভর্তিঃ ৩টি স্টেপে সাবজেক্ট চয়েজ না করলে, পস্তাতে হবে ভবিশ্বতে!

তাই যদি আপনার ছোট ভাই বোন বা আপনি নিজেই যদি শখের বশে কম্পিউটার সাইন্স এ ভর্তি হতে চান, বাদ দিন। এখানে ভর্তির আগে আপনি ভাবুন, ১বার, ২বার, ৩বার… ভাবতে থাকুন। ততক্ষন পর্যন্ত আপনি ভাবুন, যতক্ষন পর্যন্ত আপনার শখটি প্যাশনে রুপান্তর না হয়।

আর যদি মনে হয়, শখ কখনও প্যাশনে রুপান্তর হবে না, তাহলে বাদ দিয়ে দিন। কম্পিউটার সাইন্স শখ পুরনের সাবজেক্ট না। আপনি অন্য সাবজেক্ট এ পড়লে সেটা আপনার নিজের জন্য যেমন ভালো হবে, পরিবার এর জন্য ভালো হবে, সমাজ এবং দেশের জন্য ভালো হবে। যে কোন সমস্যাতে আমাদের ইমেইল করতে পারেন অথবা ফেজবুকে নক দিতে পারেন।

0Shares
কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের ৪ বছর যা শেখা উচিৎ Previous post কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিভাসিটির ৪ বছর যা যা শেখা উচিৎ
সিএসই এর ক্লাস শুরুর আগে কি কি শিখবেন? Next post সিএসই এর ক্লাস শুরুর আগে কি কি শিখবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ