আমরা অনেক সময় কম্পিউটার সায়েন্স সঠিক গাইড লাইনের অভাবে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলি, আর শেষের সেমিস্টার গুলার দিকে এসে হতাশা কাজ করে। তাই, কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের ভার্সিটির ৪ বছর কিভাবে কাটাতে পারেন এটার উপরে ১ টা গাইড লাইন দেয়ার চেস্টা করা হয়েছে। যেটা ফলো করলে আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কি এবং ভালো চাকরির জন্য টেনশন করার প্রয়োজন হবে না।
যাদের টার্গেট গ্লোবাল টেক জায়ান্ট গুগোল, ফেজবুকের মত প্রতিষ্ঠান, তাদের জন্য এই গাইড লাইন প্রয়োজ্য নয়। শুরুতেই, প্রথম দুই বছর কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের উচিৎ, টানা প্রতিযোগিতা মুলক প্রোগ্রামিং করে যাওয়া। সেটা যদি ভালো লাগে তবুও, আর যদি ভালো না লাগে তাহলেও। কিন্তু একে বারে শুরুতে সরাসরি কম্পিটেটিভ প্রোগ্রামিং এ ভালো করা সম্ভব নয়।
১ম ও ২য় সেমিস্টার:
প্রচুর পোগ্রামিং করা। অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং সর্ম্পকে জানা। এবং যে কোন ১ টা ল্যাংগুয়েজে দক্ষ হওয়া। যেমন ধরেন, সিপিপি-প্রোগ্রামিং এর সিন্টেক্স, লাইব্রেরি ফাইল গুলো, হেডার ফাইল, ওওপি এর বিস্তারিত শিখে ফেলতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কোড লিখতে হবে এবং অন্যর কোড দেখতে হবে।
৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টার:
ডাটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদম, ডিসক্রিট ম্যাথ শেখা এবং প্রোগ্রামিং কনটেস্ট করা। এলগরিদম শেখার সময় শুধু কনসেপ্ট নয়, সাথে সাথে এপ্লিকেশন শিখতে হবে। ম্যাথ কে ইগনর করা যাবে না, কারন লজিক্যাল সমস্যা সমাধানে ম্যাথ এর দরকার আছে। তবে, শুরুতেই সব ডেটা স্ট্রাকচার বা এলগোরিদম শিখতে গিয়ে হারিয়ে যাবেন না। সব থেকে জনপ্রিয় গুলো আগে শিখুন।
কন্টেষ্ট গুলোতে পার্টিসিপেট করুন। বিগিনার প্রবলেম সমাধান করার চেষ্টা করুন। পুরো সময় জুরে কন্টেষ্ট চালিয়ে যেতে হবে। পরের সেমিস্টার এ যে সব শিখতে বলা হবে সেগুলার সাথে সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কন্টেষ্ট করতে হবে।
৫ম সেমিস্টার:
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং চালিয়ে যেতে হবে। যারা প্রবলেম সলভ করে তাদের সাথে পরিচিত হোন। এর সাথে সাথে ডিজাইন প্যাটার্ন শিখেন। পাশাপাশি HTML ,CSS শেখা ও বিভিন্ন স্টাটিক সাইট বানানো। জাস্ট ফ্রি সময়ে এগুলা একটু দেখে যাবেন। মনে রাখবেন, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং হচ্ছে ফ্রাস্ট প্রায়োরিটি।
৬ষ্ট সেমিস্টার:
JavaScript এবং এর সাথে React js শেখা এবং বিভিন্ন ছোট ছোট প্রজেক্ট করা। যেমন: Todo app, ইমেজ গ্যালারি/ স্লাইডার,ওয়েদার এপ, ওয়েব সাইট তৈরি করা ইত্যাদী। আপনি যদি অনলাইন এ ডেভেলপমেন্ট রিলেটেড কিছু করতে চান,জাভাস্ক্রিপ্ট এর সাথে ডিল করাই লাগবে। তাই, জেএস গুরুত্ব দিয়ে শিখুন।
সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!
৭ম সেমিস্টার:
যে কোন ১ টা ল্যাংগুয়েজ যেমন: PHP বা C# MVC প্যাটার্ন সহ শেখা, এবং SQL থেকে কমপক্ষে ১ টা ও NoSQL থেকে ১ টা কোন ডাটাবেজে দক্ষ হওয়া। শেখার জন্য যে শুধু পিএইচপি সিলেক্ট করবেন তা না। আপনি গো বা রুবি ট্রাই করতে পারেন। মুল ব্যাপার হচ্ছে, আপনি প্রফেশনাল দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এখন, তাই আর স্ট্যাটিক সাইট বানিয়ে লাভ নেই আর কি।
৮ম সেমিস্টার:
যে কোন ফ্রেমওয়ার্কে যেমন: PHP(Laravel), Python(Django), C#( Asp.net) এর যে কোন ১ টিতে দক্ষ হওয়া এবং প্রোজেক্ট করে গিটহাবে রাখা। গিট এ আপলোড করা প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট যেটা সিভিতেও যুক্ত করবেন সেটা এই সেমিস্টার এ শুরু করবেন।
৯ম সেমিস্টার:
AWS, Microsoft Azure, Heroku, Digital Ocean এর সার্ভিস গুলা ব্যবহার করে দেখা ও ক্লাউট টেকনোলজিস সাথে পরিচিত হওয়া। পাশাপাশি বিভিন্ন মিটআপ , সেমিনারে যাওয়া শুরু করবেন। আমরা যখন ক্লাউড নিয়ে ভাবছি তখন উন্নত দেশ গুলো ক্লাউড ব্যাবহার করছে। এই রকম পিছিয়ে পরা থেকে বাঁচতে চাইলে এখনই যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
**আপনি চাইলে প্রথম সেমিস্টার থেকেই যাইতে পারেন। তবে একটা নির্দিষ্ট লেভেলের দক্ষতা অর্জনের পরে এসবে অংশ নিলে প্রচুর পরিমানে নেটওয়ার্কির এর সুযোগ পাবেন। যা আপনারে সিভি জমা দেয়া ছাড়া চাকরি পাওয়ার সুযোগ করে দিবে।
১০ম সেমিস্টার:
বিভিন্ন ইমার্জিং টেকনোলজি যেমন: আটিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট, মেশিন লানিং, আইওটি, ইমেজ প্রসেসিং, ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, বিগ ডাটা, ডাটা সায়েন্স, DevOps ইত্যাদি সর্ম্পকে ধারনা নেয়া । সিনিয়র অয়ার এ এমনিতেও এগুলা নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।
কম্পিউটার সাইন্স এর ৩ ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি পরামর্শ
১১ ও ১২ সেমিস্টার:
এই ২ সেমিস্টার ইউনিভাসিটির থিসিস, প্রোজেক্ট, প্রেজেন্টেশন, প্রাকটিকাম ডিফেন্স সহ অনেক কিছু থাকে যার কারনে অন্য কিছু করার সুযোগ নাই। তবে প্রজেক্ট হিসাবে এমন কোন কিছু নেয়ার চেস্টা করবেন যেটা সমাজের কোন সমস্যা সমাধান করে, অথবা মানুষের জীবন মানকে আরো উন্নত করে। যাতে ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার সার্টিফিকেট পাওয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে ও আইডিয়া নিয়ে আরো কাজ করতে পারেন। এমনকি ওই প্রজেক্ট আপনাকে তৈরি করতে পারে ১ টা স্ট্রাটআপ এর প্রতিষ্টাতা।
কিছু বোনাস পরামর্শ কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের যা যা করা উচিৎ –
যে বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে সে বিষয়ে প্রতি ৪ সেমিস্টার অন্তর ১ টা করে থিসিস পেপার লেখা এবং পাবলিশ করার চেস্টা করা। পাশ করার পর কমপক্ষে ২ টা পেপার থাকে।
স্টাক ওয়ারফ্লোত এর মতো ফোরামে একাউন্ট থাকা, গিটহাব প্রোটফোলিও থাকা, ফেসবুকের পাশাপাশি লিংকডিন, টুইটারে একাউন্ট থাকা, এবং একই সেক্টরের মানুষজনের সাথে নেটওয়ার্কিং করা।
কমপক্ষে ২ টা কমিউনিটির সাথে কানেকটেড থাকা, যাতে আপনার ভিতরে লিজারশীপ ও ম্যানেজমেন্ট কোলালিটি তৈরি হয়। অন্তত ১ টা কমিউনিটির ক্যাম্পাস এমবাসিডর হওয়া। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্লগ পড়া।
যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!
সফট্যওয়ার ইন্জিনিয়ারিং, ডাটাবেজ, ভিজুয়্যাল পোগ্রামিং, ডাটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদম, সি, সি++, জাভা কোর্স গুলাতে বিন্দু মাত্র ফাকি না দিয়ে কোর্সের বাইরে আরো বেশী করে পড়া এবং কোন সমস্যা থাকলে কোর্স ইনসট্রাকটরের সাথে আলোচনা করা অথবা বিভিন্ন ফোরামের সাহায্য নেয়া।
লেখাটা যারা প্রথম সেমিস্টারে আছে তাদের জন্য। কিন্তু আপনার যদি ক্যারিয়ার গোল সেট থাকে তাহলে সে অনুযায়ি রোড ম্যাপ করে কিছু বিষয় বাদ দিতে পারেন, এবং সে অনুযায়ি আরো কিছু যোগ শিখতে পারেন। তবে এটা ফলো করলে আপনি মোটামুটি যে কোন সেক্টরে আপনি কাজ করতে পারবেন।
আমি কয়েক সেমিস্টার পার করে ফেলেছি, আমার কি হবে?
যারা কয়েক সেমিস্টার পার করে ফেলেছেন, তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি যেখানে আছেন, সেখান থেকে শুরু করুন। একেবারে শুরু থেকে শিখবেন তবে যেহেতু কিছুটা পিছিয়ে আছেন তাই শিখতে হবে বেশী। ২ সেমিস্টার এর কাজ গুলো ১সেমিস্টার এ শেখা লাগবে। এভাবে শিখতে থাকলে,এক সময় পুরো লিষ্ট শেখা হয়ে যাবে।
মেশিন লার্নিং নিয়ে কথা না বলা ফ্রেন্ডদের ইমিডিয়েটলি বদলে ফেলুন!
চাইলে, কিছু বিষয় কাট-ছাট করতে পারেন যদি অনেক পিছিয়ে পরেন। তবে কোন ভাবেই, কম্পিটেটিভ প্রোগ্রামিং বাদ দেয়া যাবে না। এটা হচ্ছে অবশ্য করনীয় কাজের একটি।
লম্বা লিষ্ট থেকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারন নিয়মিত সময় দিলে এই লিষ্ট শেষ করা তেমন কঠিন কাজ নয়। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, যদি গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার থাকেন, তাহলে এর দায় আপনার নিজের। শিক্ষা ভার্সিটি, ফ্যাকাল্টি, গার্লফ্রেন্ড বা সমাজের নয়। তাই এখন থেকে সাবধান হন, যাতে করে বের হওয়ার পর সহজে চাকরী পান।
লেখাটি পুর্বে এখানে প্রকাশিত হয়েছে। মুল লেখা সামান্য পরিমার্জিত।
মুল লেখকঃ Zulkar Nayin, Full Stack Developer.
যাদের টার্গেট গ্লোবাল টেক জায়ান্ট গুগোল, ফেজবুকের মত প্রতিষ্ঠান, তাদের জন্য একটা এইরকম রোড ম্যাপ দেয়া যায়কি ?
টেক যায়ান্ট কোম্পানি গুলোর রিক্রুট প্রসেস সম্পুর্ন আলাদা এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা বিভিন্ন ফোরাম এ আছে। বাংলাতে এ রকম বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে সামনে। এই পোস্টটি ভালো লাগোলে শেয়ার করতে ভুলবেন নাহ।