আমাদের দেশে প্রতি বছর, প্রতি সেমিস্টার এ প্রচুর পরিমান কম্পিউটার সায়েন্স গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী বের হচ্ছেন। অনেক সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পাচ্ছে না। আমাদের দেশের অনেক সফটওয়ার কোম্পানি আছে তবে সেগুলা আবার ঠিক ভাবে, এক্সপেক্টেড রেশিও তে আগাচ্ছে না।

ইন্ডাস্ট্রি আমাদের ব্লেম করছে যে, দক্ষ কর্মীর অভাবে তারা আগাতে পারছে না, গ্রো করাতে সমস্যা হচ্ছে।

একই সময়ে, আমাদের গ্রাজুয়েটরা বলছে, বিশেষ করে বেকার সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পাচ্ছে না। গ্রাজুয়েশন এর পর মার্কেট এ পর্যাপ্ত জব নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? ইন্ডাস্ট্রি ঠিক নাকী গ্রাজুয়েট রা ঠিক?

গ্রাজুয়েশন শেষে যদি জব না পান, দায় একান্তই আপনার নিজের – গালিব নোটস

আমরা অনেকদিন যাবত ইন্টার্নশিপ এন্ড জবস ইন বাংলাদেশ গ্রুপ নিয়ে কাজ করার ফলে, আমাদের বেকার এবং ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের নিয়ে কাজ করার ফলে এই ব্যাপারটি আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা এডমিনরা মিলে এই বিষয়ে বিস্তর ইনভেস্টিগেশন করেছি। আমরা সবাই মিলে বেশ কয়েকটি কারন আইডেন্টিফাই করেছি।

আমরা দেখেছি, এই যে ইন্ডাস্ট্রি দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না আবার সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পাচ্ছে না! উলটা ব্লেইম করছেন, এর মুল কারন হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রি  এবং গ্রাজুয়েটদের মাঝে একটি গ্যাপ রয়েছে। এই গ্যাপ নিয়ে অনেকে জেনেও কাজ করছে না। কারন এই গ্যাপ যদি চলে যায়, তাহলে অনেকের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে ট্রেইনিং সেন্টার গুলোর।

গ্যাপ এর মুলে দুই পক্ষের ভুমিকা আছে। কিন্তু এই আর্টিকেল এ শুধু শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুলো তুলে ধরব। একজন সিএসই গ্রাজুয়েট ডিগ্রি শেষ করার পর যে সব কারনে জব পায় না সেটা ব্যাখ্যা করব। ইন্ডাস্ট্রি এর কোন বিষয় গুলো চেঞ্জ করলে, তারা বিপুল পরিমান কর্মী পেতে পারে সেটা জানতে পারেন এই আর্টিকেল এ।

ডেটা সাইন্স, মেশিন লার্নিং শিখে চাকরী নিশ্চিত করুন আজই!

প্রথম সমস্যা, ৭০% গ্রাজুয়েট এর ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড কোন স্কিলস নেই। পুরো গ্রাজুয়েশন লাইফ এ কোন কিছু না শিখে, না জেনে, শুধু মাত্র একাডেমিক বই, শিট পড়ে, ভালো রেজাল্ট নিয়ে গ্রাজুয়েশন করেছে। গ্রাজুয়েশন শেষ করেও কিন্তু তাদের কেউ স্কিলস অর্জন করে না। এই ল্যাক অফ স্কিলস এর জন্য আমাদের অধিকাংশ গ্রাজুয়েটরা চাকরী পায় না।

গ্রাজুয়েটদের অনেকে মনে করে, শিক্ষা বা ডিগ্রী তাদের সামনে জব এনে হাজির করবে। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ইন্ডাস্ট্রি বা কোম্পানি গুলো দিন শেষে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এবং তারা যদি আপনার স্কিলস না পায়, যদি আপনি তাদের কে কন্ট্রিবিউট না করতে পারেন তাহলে কেউ আপনাকে হায়ার করতে আগ্রহী হবে না।

যদি আন্ডারগ্রেড লেভেল এর রানিং স্টুডেন্ট হন বা ফ্রেস গ্রাজুয়েট হন তাহলে প্রথম দায়িত্ব হবে, ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড স্কিল অর্জন করা। যার মাধ্যমে আপনি কোম্পানির কাজে কন্ট্রিবিউট করতে পারবেন। ভালো হবে যদি স্পেসিফিক ক্যাটাগরির কোম্পানি গুলোকে টার্গেট করে স্কিল্ড হন।

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, অনেক গ্রাজুয়েট আছে তাদের কিছু স্কিলস আছে কিন্তু ডাইরেক্ট কোন টার্গেট নেই। তারা কোথায় জব করবে আর কি করতে চায় তার সঠিক কোন প্ল্যান নেই। আমাদের সাথে অনেক ফ্রেস গ্রাজুয়েট এর কথা হয়, যাদের অদিকাংশ জানেই না, তারা কি করতে চায়!

কম্পিউটার সাইন্স ইন্ডাসট্রিতে অনেক গুলো কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, এপস, আরএন্ডডি, মার্কেটিং, কিউএ সহ অনেক। বলে শেষ করা যাবে না।

যদি, আসলেই চাকরী করতে চান, তাহলে ফ্রেসার হিসাবে মেজর একটি স্কিল টার্গেট কোড়ূণ। সেটা নিয়ে স্টাডি করুন। প্রফেশনাল লেভেল এ কিছু প্রজেক্ট করুন। একটা বড় স্কিলস এর জন্য অনেক গুলো ছোট খাটো জিনিস শেখা লাগবে। সেগুলা শিখে ফেলুন।

তার পর সেই রিলেটেড জবে এপ্লাই করুন। আমাদের গ্রাজুয়েটরা দেখা যায়, রেন্ডমলি ক্যারিয়ার পোর্টাল এর মত জব সাইট থেকে সব ধরনের জবে এপ্লাই করে থাকেন। একই সাথে, সব চাকরীতে ১টি মাত্র সিভি দিয়েই এপ্লাই করে থাকেন।

সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!

এভাবে, সব চাকরীতে এপ্লাই করে চাকরীতে আবেদন করলে চাকরী পাওয়া সম্ভব নয়। যখন একটি ক্যাটাগরির চাকরীতে আবেদন করবেন এবং প্রতিবার সিভি, কাভার লেটার আপডেট করে এপ্লাই করবেন তখন চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেক বেশী।

তৃতীয়ত, সিভি ফর্মেট এ সমস্যা। এইচআর ম্যানেজার রা সাধারনত যে কোন সিভি ১মুহুর্তের বেশী দেখেন না। আর এই এক মুহুর্তের মধ্য যদি আপনার সিভি এটেনশন নিতে ব্যার্থ হয়, তাহলে আপনি জব পাবেন না স্বাভাবিক ভাবেই।

আমাদের ফ্রেস গ্রাজুয়েটরা যেটা করে, সিভি বানানোর সময়, সিনিয়রদের থেকে সিভি নিয়ে, সেখানে নাম, ঠিকানা, এড্রেস পরিবর্তন করে নিজের সিভি বলে চালিয়ে দেন। এভাবে সিভি ড্রপ করলে জব পাওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা থাকে না।

কম্পিউটার সাইন্স এর ৩ ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি পরামর্শ

চতুর্থত, অনেকের কাজের প্রমান নেই। আমাদের অনেক গ্রাজুয়েট অনেক চাকরিতে জয়েনিং এর আগে রিলেটেড কাজের প্রমান রাখেন না। কাজ পারেন বাট স্যাম্পল নেই। গ্রুপে কাজ করার সময় আমরা সিভি রিভিউ প্রোগ্রাম গুলোতে আমরা অনেক গ্রাজুয়েট কে জিজ্ঞাস করে থাকি, জবের কাজ পারেন কি না? অনেকে পারেন কিন্তু প্রমান হিসাবে কোন স্যাম্পল থাকে না।

গ্রাজুয়েট দের বুঝতে হবে, থাউজেন্ডস অফ স্কিল বিবেচনার বিষয় নয়, ওই কোম্পানিতে কি কি কন্ট্রিবিউট করতে পারবেন, সেটাই তাদের কাছে বিবেচনার বিষয়। স্কিল অর্জনের প্রমান হিসাবে রাখুন স্যাম্পল লাইভ কাজ।

এখন থেকে যদি সিভি ড্রপ করে জব না পান, বা ভাইভা তে কল না পান, তাহলে উপরের বিষয় গুলো চেক করুন। সমস্যা গুলো সমাধান করুন।

আমাদের একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আমাদের গ্রাজুয়েট দের ৪৮% বেকার। এই প্রতিযোগিতার বাজারে, যদি আপনি টিকে থাকতে চান, যদি আপনি এগিয়ে যেতে চান, তাহলে আপনাকে অন্যদের থেকে বেশী পরিশ্রম করা লাগবে। অন্যদের থেকে বেশী চিন্তা করা লাগবে। ঘুমিয়ে থাকলে কিন্তু কেউ জব এনে অফার করবে না।

ক্যারিয়ার, ইন্টার্নশিপ, জব বা সিভি! যে কোন সমস্যাতে আমাদের পেইজ এ নক দিতে পারেন অথবা আমাদের কে ইমেল করে জানাতে পারেন।

0Shares
সিএসই স্টুডেন্ট রা কি সব জান্তা সমীপেশু, galib notes Previous post সিএসই স্টুডেন্ট রা কি সব জান্তা সমীপেশু ?
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বুক রিভিউ, Galib Notes Next post ধনী হওয়ার গোপন মন্ত্র কী? রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বুক রিভিউ
Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ