বই মানুষের পরম বন্ধু,অবসরের সঙ্গী আর এই বই পড়েই যদি জেনে নেয়া যায় ধনী হবার সহজ উপায়! তখন কিন্তু একে সোনায় সোহাগা বললেও ভুল হয় না। বলছি রবার্ট কিয়োসাকির, রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড (RICH DAD POOR DAD) বইটির কথা। ধনী হবার গোপন মন্ত্র শিখে নিতে নিঃসন্দহে বেছে নিতে পারেন ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার এই বইটিকে।

মূলত ধনী ও গরীবের মানসিকতার ভিন্নতা নিয়ে এই বইটি লেখা। ধনীরা কিভাবে তাদের আর্থিক উন্নতি ঘটায় এবং কিভাবে দিনের পর দিন গরীব-মধ্যবিত্তরা তাদের মানসিকতার কারনে দারিদ্রতার লুপ থেকে বের হতে পারে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে বইটিতে। লেখক ফিকশনাল ওয়েতে জিনিষগুলো প্রেজেন্ট করেছেন বিধায় পাঠকের বোর হবার কোন চান্স নেই!

এবার আসা যাক প্রেক্ষাপটে,

লেখক “POOR DAD” বলতে বুঝিয়েছেন তার নিজের বাবাকে এবং “RICH DAD” বলতে বুঝিয়েছেন তার বন্ধু মাইকের বাবাকে।

জীবনে সফল হওয়ার ১৩ টি সিক্রেট বা কৌশল!

রবার্টের বাবা ছিলেন পেশায় শিক্ষক, মেধাবী-উচ্চশিক্ষিত ও Ph.D ডিগ্রিধারী। অপরদিকে ধনী বাবা অর্থাৎ মাইকের বাবা হাইস্কুলের গন্ডিও পেরোতে পারেন নি! তারা দুজনেই তাদের ক্যারিয়ারে সফল হলেও, ধনী বাবা মারা যাওয়ার সময় রেখে গিয়েছিলেন ১০ মিলিওন ডলার অন্যদিকে অপর জন মারা যান ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে!

তারা দুজনেই পড়াশোনার প্রতি জোর দিতেন সর্বদা তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো সম্পুর্ন ভিন্ন। অর্থ সম্পর্কেও ছিলো তাদের ভিন্নমত।

লেখক ও তার বন্ধু মাইক তাদের ধনী-গরীব দুই বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা পেয়েছিলেন যা পরবর্তিতে তাদের চিন্তা ভাবনায় বেশ প্রভাব ফেলে।তবে পুরো বইটি জুড়ে লেখক তার ধনী বাবার দেখানো পথে হাঁটতেই উৎসাহিত করে গেছেন ।

লেখকের গরীব বাবা উপদেশ দিতেন ভালো করে পড়াশোনা করতে যাতে ভালো কোম্পানিতে চাকরি করে অর্থ উপার্জন করা যায়।অপরদিকে ধনী বাবা বলতেন শেখার জন্য পড়তে, কেননা পরিপুর্ন শিক্ষা থাকলে তা থেকে অর্থ উপার্জনের পথ বের হবেই।

গরীব বাবা শেখাতেন জীবনে টাকা-পয়সা নিয়ে কখনো রিস্ক না নিতে আর ধনী বাবা উতসাহিৎ করতেন টাকাকে পূঁজি করে টাকা বাড়াবার জন্য রিস্ক নিতে।তিনি বলতেন, “Learn to manage risk” গরীব বাবা মনে করতেন অর্থই সকলের অনর্থের মূলে অন্যদিকে ধনী বাবা ভাবতেন অর্থাভাবেই সকল সমস্যার সৃষ্টি।

পরিচিত মানুষ এবং বন্ধুদের মন জয় করতে যে বই পড়তে পারেন!

ধনী বাবা শিখিয়েছেন বড় হতে হলে কিভাবে বাক্সের বাইরে চিন্তা করতে হয় আর সেখানে গরীব বাবার চিন্তা ছিলো নিদৃষ্ট এক গন্ডির ভেতরেই আবদ্ধ।

এছাড়াও ধনী বাবা সর্বদা এসেটের প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কাজের পাশাপাশি এসেট বাড়াতে তবে লায়াবিলিটি নয়। এখন এসেট-লায়াবিলিটি বুঝতে আভিধানিক অর্থে না গিয়ে আমরা সহজ ভাষায় বলতে পারি,যা আমাদের পকেটে টাকা ঢোকাবে তা হলো এসেট আর যা পকেট থেকে উল্টো টাকা বাহির করে নেবে তাই লায়াবিলিটি।বেশিরভাগ মানুষের জীবনে পিছিয়ে পরার পেছনে রয়েছে এ দুই এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা।

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বইটিতে লেখক ৫টি কারণ উল্লেখ করেছেন যা আমাদের বড় হতে বাঁধা দেয়। সেগুলো হলো-

১।চিন্তার ধরনঃ চিন্তার ধরন বা দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে জীবনের উত্থান বা পতন।এক প্রেক্ষাপটে লেখকের গরীব বাবা বলেছিলেন ” এই কাজ সম্ভব না”! অপরদিকে ধনী বাবা বলেন “কাজটি সম্ভব করার জন্য আমরা কি করতে পারি?” এখান থেকেই পার্থক্য স্পষ্টভাবে পরিলিক্ষিত হয়, একজন সমস্যাটিতে না ঢুকেই গিভ আপ করে দিচ্ছে সেখানে অন্যজন সেটা সমাধানের উপায় খুঁজছে।

২) ভয়ঃ মানুষ নতুন কিছু করতে ভয় পায়,কখনো রিস্ক নিতে চায় না।এই শঙ্কাই তাদের পিছে ঠেলে দেয়। লেখক বলেছেন- “The primary difference between a rich person and a poor person is how they manage fear.”

৩) অলসতাঃ শেখার কোন শেষ নেই। যে যতো বেশি জানবে ততোই সামনে এগিয়ে যাবে, কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আমরা বর্তমানকেই পর্যাপ্ত ধরে নেই। “Once a person stops searching for information and self-knowledge, ignorance sets in.” – Robert Kiyosaki

সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!

৪) অহংকার ও আত্বকেন্দ্রিকতাঃ পিছিয়ে পরার পেছনে অহংকার ও আত্বকেন্দ্রিকতার ভুমিকাও কম নয়,আমাদের ভেতর অন্যকে শেখানোর প্রবণতা খুব কম । “I have found that the more I teach those who want to learn, the more I learn.” – Robert Kiyosaki

৫)ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহন না করাঃ জীবনে সফল ব্যক্তিদের ঝুলিতেও কিন্তু ব্যার্থতার হার কম নেই! তবুও তারা আজ সফল,এর পেছনের কারন হলো তারা তাদের ব্যর্থতা থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যাবার প্রবণতা। “Failure inspires winners. And failure defeats losers. It is the biggest secret of winners. It’s the secret that losers do not know. The greatest secret of winners is that failure inspires winning; thus, they’re not afraid of losing.”

লেখক শুধু সমস্যা গুলোকেই বর্ণনা করে বই শেষ করেননি, বরঞ্চ তার সমাধানও উল্লেখ করে গেছেন।

আমাদের সুদীর্ঘ শিক্ষাজীবনে আমরা নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করি কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে আমাদের কোথাও সেভাবে অর্থ উপার্জন সম্পর্কে শেখানো হয়না যা কিনা অতি গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের এই অর্জিত জ্ঞানকে কিভাবে অর্থ উপার্জনে কাজে লাগাবো তার কিছুই শেখানো হয় না কোথাও ফলে বেশিরভাগ অর্জিত বিদ্যাই বিফলে যায় শুধুমাত্র প্র্যাক্টিকাল ধারনার অভাবে। তাই এই বইটিতে লেখক মানি ম্যনেজমেন্ট ও ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

বইটি পড়ে আপনি যে লাইফ লেসনগুলো পাবেন তা বদলে দিতে পারে আপনার অর্থ সম্পর্কে প্রথাগত চিন্তাভাবনা, যা কিনা ছিলো উন্নতির অন্তরায়। এছাড়াও আপনি যদি উদ্দ্যক্তা হতে চান তবে এই বইটি হতে পারে আপনার পারফেক্ট সহায়ক।

৪ ধাপে ইংরেজীতে কথা বলুন গেরান্টি সহকারে!

কিভাবে রিস্ক নিতে হয়,কিভাবে চিন্তা করতে হয়,কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হয় , জীবনে বড় হতে কোন জিনিষগুলো এড়িয়ে চলতে হয়, এসবকিছুই পাবেন এই রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বইটিতে।

আমার নিজের ভাষায় বইটি সম্পর্কে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। পড়ে কিছুটা উপকৃত হলেই লেখার স্বার্থকতা।

Written by,

Sadikun Nahar Borna,
sadikun.nahar97@gmail.com

যেহেতু বই এর রিভিউ এটা তাই, লেখকের কোন লেসন ডাইরেক্ট তুলে দেয়া হয় নি। যারা বইটি পড়তে চান, রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বই কিনে পড়তে পারেন। বইটি স্বল্প মুল্য হোম ডেলিভারি পেতে আমাদের পেইজ এ নক করুন।  

0Shares
সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পায় না কেন, galib niotes Previous post সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পায় না কেন?
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিশ্বত, galib notes Next post কম্পিউটার সাইন্স ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিশ্বত কি?

2 thoughts on “ধনী হওয়ার গোপন মন্ত্র কী? রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বুক রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ