২০২০ এর শুরুতে উইডেভস ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, “ওয়ার্ডপ্রেস কন্টেন্ট রাইটিং” পজিশনের জন্য। ইন্টারভিউ কল পাওয়ার আশা ছিল নাহ। সেখানে ফাইনাল ইন্টারভিউ পর্যন্ত যাওয়া বিশাল ব্যাপার ছিল আমার জন্য।
উইডেভস এর ইন্টারভিউ এক্সপেরিয়েন্স নিয়েই আজকের ব্লগ! তবে শুরুতে একটা ব্যাপার ক্লেয়ার করে রাখি! আমি ২ বার উইডেভস এ ইন্টারভিউ পর্যন্ত গিয়েছি।
এর বাইরেও আমি উইডেভস এর এইচআর এ আমি একাধিকবার কথা বলেছি। যে সব অভিজ্ঞতা শেয়ার করব এই পোস্টে!
উইডেভস এ ওয়ার্ডপ্রেস কন্টেন্ট রাটিং পোস্ট এর জন্য আবেদন করি ২০২০ সালের শুরুর স্লটে। তবে আবেদন করার সময়ে আমি নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলাম যে, কল আসবে না।
আমার সিভি ছিল খুবই প্রিসাইজ, ছোট্ট ১ পাতার সিভি। অভিজ্ঞতা নাই, ডিগ্রি নাই, পোর্টফোলিও নাই।
তার পরও উইডেভস এর সাইট থেকে আবেদন করলাম সাহস করে। বেশ কিছু অথ্য দেয়া লাগে এখানে আবেদন করে। আমি শুরুতে সেগুলা নোট করলাম। পরে ফাইনাল আবেদন করলাম।
আবেদন এর সময়ে সম্ভবত ২-১ টা আর্টিকেল জমা দিতে হয়। সঠিক মনে করতে পারছি না। আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়। এখানে আবেদন এর সময় পার্সনালিটি কেমন সেটা দিতে হয়।
পার্সোনালিটি ইন্ট্রভার্ট দিয়ে ইনপুট দিলে নেয় না। URL ইনপুট চায়। অনেক্ষন ট্রাই করে হল না। পরে দিলাম, www.ইন্ট্রভার্ট.com, এবার নিয়ে নিল।
এসাইনমেন্ট এর জন্য শর্ট-লিস্টেডঃ
কিছুদিন পর মেইল পেলাম, আমাকে কন্টেন্ট রাইটিং পজিশনের জন্য শর্টলিস্টেড করা হয়েছে। একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছেন যেটা ৭ দিনের মধ্য শেষ করে জমা দিতে হবে।
আমি এই ইমেইল দেখে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারি নি। আমি ভাবছিলাম, আমার ভুল হচ্ছে, হ্যালুশিনেশন হচ্ছে!
এ রকম মনে হওয়ার কারন হচ্ছে, উইডেভস আমার কাছে তখন ড্রিম কোম্পানি ছিল (এখনও আছে, যদিও এক্সপিডস্টুডিও এখন আমার সব থেকে বড় ড্রিম কোম্পানি!) আর আমার ডিগ্রিও ছিল না, তাই এত বড় কোম্পানি থেকে ইমেইল বিশ্বাস করতে পারছিলাম নাহ।
যাই হোক, ১দিন পরও দেখি ইমেইলটা ইনবক্সেই আছে। তখন বিশ্বাস করলাম যে, আসলেই আমি শর্টলিস্টেড হয়েছি। এসাইনমেন্ট দেখলাম, বেশ বড় কিন্তু ভয় পেলাম না। কারন তত দিনে আমি লিখতে অভ্যাস্ত হয়ে গেছি।
এসাইনমেন্ট শুরু করলাম। আমার মনে আছে, ক্লাসের ফাকে ফাকে ল্যাবে বসে এসাইনমেন্ট করতাম। বাড়িতে পিসিতে বসে এসাইনমেন্ট করতাম আর উইডেভস এর ইমেইল টা দেখতাম।
এসাইনমেন্ট শেষ করে জমা দিলাম। এবারও একই চিন্তা যে, ইন্টারভিউ এ কল পাবো না। তবে এই বার মনের মধ্য ক্ষীন একটা আশা। কল পেলেও পেতে পারি। অপেক্ষা করি। দিন যায়, সময় যায় কিন্তু কল বা ইমেইল কিছুই আছে না।
ইন্টারভিউ কল তবে পরিক্ষাও আছেঃ
অনেকটা ভুলেই গেছি উইডেভস এর কথা! একদিন হঠাত দেখি উইডেভস থেকে ইমেইল এসেছে। ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। সামনের শুক্রবার যেতে পারলে, কনফার্ম করার জন্য বলা হয়েছে।
উফ! উইডেভস থেকে ইন্টারভিউ কল! কিন্তু এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে। পরিক্ষা হবে শুরুতে। পরিক্ষার সময় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইন্টারভিউ এর জন্য যতটা এক্সসাইটেড হয়েছিলাম, পরিক্ষার কথায় ততটাই ভয় পেলাম।
আমার একটা বিশেষ এবিলিটি হচ্ছে, যে কোন পরিস্থিতিতে হ্যাপি থাকতে পারা। আমার মনে আছে, আমার এইচএসই এর ফলাফল যখন খারাপ হয়, আমি নিজেই সেটা অন্যদের হাসিমুখে জানিয়েছিলাম।
তো, উইডেভস এর ইন্টারভিউ এর আগে যেহেতু পরিক্ষা আছে তাই ধরেই নিলাম, ইন্টারভিউ থেকেই বাদ যাচ্ছি। তো বাদ যাচ্ছি এটা কনফার্ম ধরে নিয়েই সেলিব্রেট করা শুরু করলাম।
যেমন বাসায় বললাম, উইডেভস নামের অনেক বড় একটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। আমি তো ইন্টারভিউ কলের জন্য আশাই করি নাই। আর আমি এটাও জানি, চাকরি হবে না এখানে।
জুনিয়রদের বলেছি, উইডেভস এ যাচ্ছি। লেটস হ্যাভ সাম রিজেকশন এক্সপেরিয়েন্স।
পরিক্ষার আগের দিন আমি সাধারনত আপডেটেট সিভি প্রিন্ট করে রাখি। উইডেভস এর জন্য একই কাজ করলাম। রাত পেরুলেই উইডেভস এ ইন্টারভিউ। সুপার এক্সাইটেড, ম্যাপ এ এডড্রেস দেখে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু ঘুম কি আর আসে?? সে গল্প আরেকদিন।
পরিক্ষা এবং বোর্ড ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতাঃ
শুক্রবার সকালে উঠে রওনা দিলাম উইডেভস এর অফিস এর দিকে। আমি থাকি মিরপুর ১২ তে আর উইডেভস এর অফিস মিরপুর ডিওএইচএস এ। তাই হেটেই যাওয়ার ভাবনা।
ওখানে গিয়ে রাস্তা ভুল করলাম। আর রাস্তা খুজে পেতে পেতে আমার বেশ সময় লাগল। অফিস এ গিয়ে দেখি, অন্য ইন্টারভিউইরা চলে এসেছে। সম্ভবত পরিক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
একটু পর আমাকেও প্রশ্ন দেয়া হলো। কিছু প্রশ্ন ছিল এমসিকিউ টাইপ আর কিছু ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং। সেগুলা ফিল-আপ করলাম। জিয়ারই এর সাথে পরিচিত থাকাতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না।
পরিক্ষা দেয়ার পর ভাইভা এর জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো। ভাইভা বোর্ড এ সব চেয়ে ইম্পর্টেন্ট ছিল এনভার্নমেন্ট। খুবই ফ্রেন্ডলি ছিলেন ইন্টারভিউয়ার রা। কথা বলার সুযোগ দিচ্ছিলেন।
খুব সারপ্রাইজিং একটা ব্যাপার ছিল ভাইভাতে। কোন রকম ইরিলিভেন্ট প্রশ্ন ছিল নাহ। আর প্রশ্নের উত্তর এর সাথে সাথে ইন্টারভিউয়ার এর এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হচ্ছিল নাহ। তাই উত্তর ঠিন না ভুল হচ্ছে সেটাও বুঝা যাচ্ছিল না।
কথা বলার সময়ে মনে হচ্ছিল, ৫ মিনিট কথা বলেছি। কিন্তু বাইরে এসে জানলাম, ২৫-৩০ মিনিট ভাইভা দিয়েছি আমি। যাই হোক, বাসায় চলে আসলাম। এবার শুরু হলো আসল অপেক্ষা।
ফলাফল এবং অবজার্ভেশনঃ
ভাইভা খুব ভালো হওয়াতে এক্সপেক্টেশন খুব বেড়ে গিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, সিলেক্ট হব। তাই অপেক্ষা করছিলাম উইডেভস কোম্পানির কলের জন্য। বাসায় বলেছিলাম, পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছিল।
দিন যায়, সপ্তাহ যায় কিন্তু কল আর আসে না। আমার মনে হচ্ছিল যে, দেরিতে হলেও কল পাবো। কিন্তু পরবর্তীতে যখন নতুন রাইটারদের ব্লগ দেখলাম, তখন ধরে নিলাম, বাদ পরেছি।
উইডেভস এর এনভার্নমেন্ট নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। অফিস ডেকোরেশন চমৎকার। মিটিং রুম, ম্যানেজমেন্ট, ডেভেলপার স্পেস আলাদা। সেটা দেখেই বুঝা যাচ্ছিল।
আমি ভেবেছিলাম শুক্রবার উইকেন্ড তাই অনেক কর্মী দেখে অবাক হয়েছিলাম। এখানকার ইঞ্জিনিয়ারদের দেখে খুব ভালো লাগছিল। ওই সময়ে এটা বিরাট ব্যাপার ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, চাকরি না হোক, এই রকম অফিস এ তো তাও আসতে পারলাম।
বাদ পরার কারনঃ
প্রতিটি স্টেপ এ নিজেকে বাদ ধরে, ফাইনালি ভাইভা পর্যন্ত যাওটা বড় ব্যাপার ছিল। ভাইভা ভালো হওয়াতে বাদ পরার কোন কারন আমি দেখছিলাম নাহ। আমি অনেক দিন পর্যন্ত কারন খুজে পাই নি।
এই বছর আবেদন এর সময় জানতে পারি, আমার মোবাইল সুইচড-অফ থাকায়, আমার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয় নি। সেটাই ছিল বাদ পরার মুল কারন।
উইডেভস এইচআর অভিজ্ঞতাঃ
উইডেভস কোম্পানিতে আমার এইচআর অভিজ্ঞতা ছিল খুবই ভালো। প্রথমত, এসাইনমেন্ট এর ইমেইল এর কথা যদি বলি, কাজের সাথে সাথে রিলেটেড রিসোর্স দেয়া ছিল। এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল।
ভাইভা অভিজ্ঞতা এতই ভালো লেগেছিল যে, গালিব নোটস এ একটা রিভিউ ভিডিও বানানোর অনুমতির জন্য ইমেইল করেছিলাম। সেটাতে এইচয়ার থেকে নিতিগত সম্মতি দিয়েছিলেন। যদিও ব্যাস্ততায় পরে আর সেই ভিডিও বানিয়ে উঠতে পারি নাই।
২য় বার আবেদন এর সময়ে আমি আবার উইডেভস এর এইচআর এ যোগাযোগ করি। আমি খুবই অবাক হই, উনাদের রিসপন্স দেখে। উনারা এত্ত হেল্পফুল যে, আমার মনে হয় আমাদের পরিচতি সিনিয়র রাও এমন নাহ।
একবার না পারিলে দেখ ২য় বারঃ
এই বছর আবার আমি ওয়ার্ডপ্রেস কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে আবেদন করি। তবে নানান কারনে, মোটামটি নিশিচত ছিলাম যে, আমি এসাইনমেন্ট এর জন্য লিস্টেড হব।
আবেদন এবং এসাইনমেন্ট জমা দেয়াঃ
এবারের আবেদন এর সময়ে আগের মতই ওয়েব সাইট থেকে করতে হয়েছিল। তবে এবার আমার সিভি আপডেটেড ছিল। অনেক রিলেটেড স্কিল ছিল। আর সেই যে পার্সনালিটি টাইপ কি, সেটার উত্তর ঠিক করে দিতে পেরেছিলাম।
এসাইনমেন্ট এর জন্য ইমেইল পাওয়ার পর আমি সেটা করে জমা দেই। কিন্তু সেই সময়ে বন্ধ যাচ্ছিল নানান কারনে। তো, কিছু দিনের মধ্য উইডেভস থেকে জানায়, আমাদের এসাইনমেন্ট রিভিউ করতে সময় লাগবে।
আগেই বলেছি, উইডেভস এর এইচআর এর পার্ফরমেন্স অসাধারন। সময় লাগবে জানিয়ে ইমেইল থেকে সেটা আরও পরিষ্কার হলো।
তারও কিছুদিন পর এক বিকেলে ফোন দিয়ে, অনলাইনে উইডেভস ইন্টারভিউ এর ডেট জানিয়ে দেয়া হলো। টাইম স্লট কনফার্ম করতে কিছু সময় দেয়া হয়েছিল।
ইন্টারভিউ থেকে ফর্মাল বিদায়ঃ
যেহেতু, আমি আগেই একটি চাকরি কনফার্ম করেছি। এথিক্যাল দিক চিন্তা করে, পরিবার এর সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমি আর উইডেভস ইন্টারভিউ প্রসেস কন্টিনিউ করব না।
এই সিদ্ধান্ত তাদের কে ফরমালি জানিয়ে দেই। তবে এটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। যেহেতু এই কোম্পানিটি দেশের অন্যতম আইকনিক কোম্পানি।
গালিব নোটস এর ইন্টারভিউ সেকশনের ব্লগ গুলো মুলত আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স করা জব ইন্টারভিউ নিয়ে। এখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার যেটা থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এর ইন্টারভিউ নিয়ে অনেকে জানতে পারবে।