কুইন্সল্যান্ডইউ তো বটেই, মেলবোর্ন এর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট এর শেষ দিকে থিসিস কোর্স করতে হয়। এই কোর্সটি অন্যান্য কোর্স থেকে আলাদা কারন এখানে প্রথাগত পরিক্ষা হয় না। বা প্রথাগত সিলেবাস থাকে না।
অনেক শিক্ষার্থী শুধু মাত্র ভুল সাবজেক্ট সিলেক্ট করার কারনে পুরো থিসিস কোর্স এ সাফার করে থাকে। আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে, সাবজেক্ট চেঞ্জ এর ঘটনাও কম নয়।
আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেল এর খুব বড় মাপের রিসার্চ না হলেও, এই রিসার্চ এর গুরুত্ব রয়েছে। প্রথমত যারা একাডেমিক লাইন এ থাকতে চায়, যারা বিজ্ঞানী হতে চায়, তাদের রিসার্চ শুরু হয় আন্ডারগ্রাজুয়েট লাইফ এ। আর আন্ডারগ্রেড লেভেল এ সামান্য থিসিসও একজন শিক্ষার্থীকে অন্য সব ক্যান্ডিডেট থেকে এগিয়ে রাখে অনেক।
ফ্রেশ সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্যালারি কম কেন ?
বিশেষ করে, উচ্চ শিক্ষায় নর্থ-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস এর গুরুত্ব অপরিসীম। যারা সরাসরি বিএসই করে পিএইচডি করতে চায়, তাদের জন্য এটা আরও গুরুত্বপুর্ন।
এই আর্টিকেল টি মুলত কম্পিউটার সাইন্স এর শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও, অন্য সাবজেক্ট এ ম্যাথড গুলো এপ্লাই করা যেতে পারে। তবে, অন্য সাবজেক্ট এর রিসার্চ ফিল্ড গুগোল বা সাইন্স জার্নাল থেকে খুজে বের করতে হবে নিজ দায়িত্বে।
থিসিস কোর্স শুরুর কয়েক মাস আগে থেকে থিসিস নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করা উচিৎ। ভালো হবে যদি ২ সেমিস্টার আগে থেকে টাচে থাকেন। তবে দেরি করে ফেললে চিন্তার কিছু নাই। অন্যদের থেকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে আর কি।
মুল আলোচনাটি কিছুটা লম্বা হবে তবে যারা স্কিপ করে পড়বেন তাদের জন্য থিসিস এ ভালো করার সম্ভাবনা খুবই কম। এই টিপস গুলো রিসার্চ এড়িয়া এবং রিসার্চ টপিক সিলেক্ট এর সময় ব্যাবহার করা যাবে।
সবার শুরুতে ভাবতে হবে, ফিউচার গোল কি? একাডেমিশিয়ান হতে চান নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল? যদি একাডেমিশিয়ান হতে চান তাহলে এক রাস্তায় যেতে হবে আর যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হতে চান তাহলে অন্য রাস্তা। যদিও যে কোন সময় আপনি সুইচ করতে পারবেন তবে কিছু কাজ করার পর যদি সুইচ করতে চান তাহলে আপনার আগের কাজ এর কোন মুল্য থাকবে না।
ধনী হওয়ার গোপন মন্ত্র কী? রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বুক রিভিউ
কুইন্সল্যান্ডইউ তে সাধারনত মেশিন লার্নিং, ডেটা সাইন্স, আইওটি, নেটওয়ার্কিং এর মত কোর্স গুলোর থিসিস হয়ে থাকে। এখন যদি একাডেমিক লাইনে থাকতে চান, তাহলে যে কোন টপিক আপনি সিলেক্ট করতে পারেন। কারন উন্নত বিশ্বে কম্পিউটার সাইন্স এর সব বিষয়ে প্রচুর রিসার্চ হয়ে থাকে।
কিন্তু যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হতে চান, তাহলে আইওটি বা মেশিন লার্নিং খুব একটা সাহায্য করবে না। অন্তত লোকাল চাকরিতে। যদি নেটওয়ার্কিং ফিল্ড এ কাজ না করতে চান, তাহলে নেটওয়ার্কিং এ তেমন হেল্প পাবেন না ক্যারিয়ার এ। ডেটা সাইন্স রিলেটেড কাজ করা যেতে পারে।
টপিক সিলেক্ট এর ব্যাপারে ঢাকার একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, “এমন টপিক সিলেক্ট করা লাগবে যেটাতে সে নিজে কাজ করতে চায়। থিসিস এ যেহেতু প্রথাগত পরিক্ষা হয় না আর প্রচুর স্টাডি করা লাগে। তাই টপিক নিজের পছন্দের না হলে, একটা সময় পড়ার পর আগ্রহ থাকে না। তখন সেটা প্রেশার হয়ে যায়। সো, একেবারে শুরুতে ভাবতে হবে, কি করতে ভালো লাগে। তার পর সেটা সিলেক্ট করা লাগবে।”
এখন অনেকে আছে যাদের চাকরি বা গবেষনা কোনটাই করার ইচ্ছা নেই। তাদের জন্য উপদেশ হচ্ছে, যে টপিক এ নেন না কেন, কিছুটা ফেভারের ফ্যাকাল্টির সুপারভাইজ নিবেন। তাহলে, পার হয়ে যেতে পারবেন। মানেন আর নাই মানেন, থিসিস বা গবেষনা সবার জন্য নয়। তবে অনেক ইউনিভার্সিটির পলিসি অনুযায়ী সবাইকে গনহারে থিসিস কোর্স নিতে হয়। যদিও আমাদের কুইন্সল্যান্ডইউ তে এই সমস্যা হয় নাহ।
থিসিস টপিক সিলেক্ট এর ব্যাপারে একটা সিম্পল প্রসেস ফলো করা যেতে পারে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এই সিম্পল প্রসেস জানিয়েছেন।
নাম্বার ওয়ানঃ যেহেতু বেশির ভাগের আইডিয়া নেই, শুরুতে বিভিন্ন ফিল্ড এর আইডিয়া নিতে হবে। এক্ষেত্রে ইউটিউব এ বিভিন্ন টপিকের ভিডিও দেখে বা গুগোল থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে আইডিয়ে নেয়া যায়। শুরুতে টপিক গুলো বুঝতে সমস্যা হলেও, চেষ্টা করে যেতে হবে বুঝার জন্য। এক সময় আসতে আসতে বুঝা যাবে টপিক গুলো।
সিএসই গ্রাজুয়েট চাকরী পায় না কেন?
বিভিন্ন রিসার্চ পেপার পড়া, লিটারেচার রিভিউ, রিসার্চ-গেট এবং গুগোল স্কলার সাথে পরিচিত হতে হবে। ব্যাবহার করতে করতে পরিচিত আসবে। এবং এসব সোর্স থেকে ধারনা নিতে হবে। টেক জায়ান্ট গুলোর ব্লগ বা বিভিন্ন নামী-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ পেইজ থেকে নিউ টপিক এর ধারনা পাওয়া যেতে পারে।
ফেজবুক রিসার্চ, গুগোল রিসার্চ, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি সিএস ব্লগ, খান একাডেমি বা স্ট্যানফোর্ড ব্লগ গুলো ওয়ার্ল্ড ওয়াআইড অনেক জনপ্রিয়। তবে এগুলা তো ইন জেনারেল। টপিক স্পেসিফিক অনেক ব্লগ আছে সেগুলা একটু গুগোল সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।
নাম্বার টুঃ যদি ভিডিও দেখে বা ব্লগ পড়ে আইডিয়া ক্লেয়ার না হয় তখন বাংলা ব্লগ দেখতে হবে। বাংলাতে বিভিন্ন রিসার্চ টপিক নিয়ে অনেক ব্লগ আছে। সেগুলা পড়তে হবে। বাংলা ভিডিও থাকলে দেখতে পারে। গুগোল এ বাংলা কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দিলে বাংলা কনটেন্ট আসবে। আর সেটিংস থেকে রিসেন্ট ব্লগ সিলেক্ট করে নতুন আর্টিকেল দেখা সমভব।
যেমন কেউ যদি মেশিন লার্নিং নিয়ে জানতে চায়, তাহলে সার্চ দিতে পারে, মেশিন লার্নিং কি, এমএল এর ফিউচার কি, এমএল এর রিসার্চ এড়িয়া কি ইত্যাদি। এখন বাংলা তে কোয়ারা শুরু হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন করা যেতে পারে। কোয়ারা ইংলিশ এ প্রচুর রিসোর্স আছে।
বাংলাতে জনপ্রিয় ব্লগের মধ্য রয়েছে হাউটুকোড বিডি, বাংলা মিডিয়াম, বিজ্ঞান যাত্রা, বিজ্ঞান মেলা, বাংলা কোয়ারা এবং উইকিপিডিয়া সাইট গুলো। ইনডেপথ আইডিয়া এর জন্য রিলেটেড অনেক আর্টিকেল পাওয়া যায়। সেগুলাও পড়ে ফেলতে পারে একজন শিক্ষার্থী।
নাম্বার থ্রিঃ যদি ১ বা ২ নাম্বার এ টপিক গুলো বুঝতে না পারে বা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে একাডেমিক টিচারদের সাথে কথা বলতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, রিসার্চ এর অভিজ্ঞ কারও থেকে পরামর্শ নেয়া টা বেশি সাহায্য করবে শিক্ষার্থীদের।
টপিক কোনটা ভালো বা কোনটা খারাপ সেটা কাজ না করে বুঝা সম্ভব নয়। কোন সমস্যা হয়ত সারফেস লেভেল এ ইন্টারেস্টিং আবার কোনটা ডিপ লেভেল এ। তবে, সব সমস্যা ই ইন্টারেস্টিং একটা সময়ে।
উল্লেখ্য, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস কোর্স টি শুরু মাত্র কয়েকটি প্রেজেন্টেশনের মধ্য সীমাবদ্ধ রেখেছে। এরকম শুধু প্রেজেন্টেশন দিয়ে নিজেদের টিচার থেকে ভালো গ্রেড নিয়ে বের হওয়া সম্ভব হলেও, সেই থিসিস এর বাইরে কোনই গুরুত্ব নেই। তাই যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান, তারা থিসিস এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
রিসার্স আউটপুট এর চিন্তা করবেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সাথে সাথে রিসার্চ করে কিভাবে সেটা শিখুন। কারন, পিএইচডি লেভেল এ রিসার্চ ই সব কিছু। আর আপনি যদি রিসার্চ এ ভালো হন, তাহলে উগান্ডা দেশ বাদে সারা বিশ্বের দরজা আপনার জন্য খুলে যাবে। বিভিন্ন দেশ ফান্ড আর ভিসা নিয়ে রিসার্চারদের জন্য দড়জা খুলে রেখেছে।
ইন্টার্নশিপ প্রিপারেশন নিবেন যে ভাবে ও যখন থেকে
আপনাকে আইনিস্টাইন লেভেল এর কোন রিসার্চ করতে হবে না। ছোট-খাটো কোন বিষয় নিয়ে কাজ করুন বাট নিজের কাছে সৎ থাকুন আর কাজ টা ডেডিকেটেড সময় দিয়ে করুন। আন্ডারগ্রেড এর থিসিস যেহেতু জীবনের প্রথম রিসার্চ ওয়ার্ক তাই এখানে যত বেশি সময়ন দিবেন, তত ভালো আউটপুট আসার সম্ভাবনা থাকবে।
আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ নিয়ে আমরা আরেকটি ব্লগ লিখব আরও কিছু এডভান্স বিষয়ে। চেষ্টা করছি রিসার্চ লাইনে নর্থ-আমেরিকান অভিজ্ঞতা আছে এমন কারও সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে।
এই আর্টিকেলটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারা সঠিক ভাবে আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস টপিক সিলেক্ট করতে পারে। আর যে কোন সমস্যা তে গালিব নোটস এর ফেইজবুক পেইজ এ নক দিতে পারেন।
🙂
ধন্যবাদ বিকন, কমেন্ট করার জন্য। এটা গালিব নোটস ব্লগ এর জন্য প্রাউড মোমেন্ট যে, একজন মেশিন লার্নিং এর মস্ত বড় বিজ্ঞানি আমার ব্লগে কমেন্ট করেছেন।