জিরো টু ওয়ান বুক রিভিউ: কিভাবে অল্প পুঁজির নতুন ব্যবসাকে একদিন বিশাল কোম্পানীতে পরিনত করবেন।

বিখ্যাত অনলাইন আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান PayPal এর ৫ প্রতিষ্ঠাতার একজন, “পিটার থেইল” । বাস্তবের আয়নম্যান খ্যাত “ইলন মাস্ক” এবং আরও তিনজনের সাথে মিলে ১৯৯৮ সালে PayPal প্রতিষ্ঠা করেন “পিটার থেইল”। নিজের হাতে প্রায় শূণ্য অবস্থা থেকে PayPal কে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার কোম্পানীতে পরিনত করেন তাঁরা।

পিটার থেইলকে হয়তো আমরা সবাই চিনি, প্রায় শূণ্য অবস্থান থেকে PayPal কে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার কোম্পানীতে পরিনত করতে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

Facebook, Linkdin,Ylep সহ অনেক প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন এবং তার বিনিয়োগকারী সব প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন সফল।

কয়েক বছর আগে “পিটার থেইল”  আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা বিষয়ক একটি লেকচার দিয়েছিলেন। একটি নতুন ব্যবসা শুরু করে তাকে বিলিয়ন ডলার কোম্পানীতে পরিনত করার কয়েকটি নীতির কথায় ছিল তার লেকচারের মূল টপিক।

তবে তাঁর এই ফর্মূলাগুলো আমাদের কাছে আসার একটি মজার গল্প আছে—

তিনি যখন লেকচার দিচ্ছিলেন তখন সেই সভায় “ব্লেক মাস্টার্স ” নামে একজন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন এবং এই নীতি বা principles গুলো “ব্লেক মাস্টার্স” নামের  ছাত্রটি খুব তারাতাড়ি করে সেখানে বসেই খাতায় বিস্তারিত ভাবে নোট করে নেন।

এবং পরবর্তীতে “ব্লেক মাস্টার্স” নীতিগুলোকে কিছু লোকজনে সাথে শেয়ার করেন। সেই নোট ফলো করে লোকজন এতটাই সাফল্য পেল যে,  তার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।

আন্ডার গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ -বিমান খরচ সহ

“পিটার থেইল” যখন বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন তিনি ভাবতে লাগলেন, তার এই জ্ঞানকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলে অনেক মানুষ হয়তো এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হবেন।

 তখন তিনি “ব্লেক মাস্টার্সের” সাথে মিলে সেই নোটটিকে আরও সমৃদ্ধ করে ‘জিরো টু ওয়ান‘ নামে একটি বই বের করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর জ্ঞান থেকে যেন সারা পৃথিবীর মানুষ উপকার পায়।

সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র পরিকল্পনায় যথেষ্ট নয়, দরকার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এই বইয়ের অন্যতম দিক হচ্ছে, সাফল্য অর্জনের জন্য একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখার সুযোগ দেওয়া এবং তার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি প্রদান করা। যেহেতু আপনি এই লেখাটি পড়ছেন, সেহেতু আপনিও সেই মানুষদের একজন হতে চলেছেন। বইটি এক বসায় পড়ে শেষ কারার মতো না বরং সময় নিয়ে জানার মতো   – তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

নীতি ০১: ‘০’ থেকে ‘১’ এ যান:

মানুষ যখন চলাচলের জন্য ঘোড়া ব্যবহার করতো, তখন যদি আপনি মানুষকে প্রচলিত ঘোড়ার চেয়ে আরও ভালো জাতের তেজী ঘোড়া এনে দিতেন, বা ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা করতেন, তাহলে সেটি হত ১ থেকে N (N হচ্ছে একটি ধরে নেয়া মান, যা ১ এর আওতাতেই থাকে। সোজা কথায়, ইউনিক কিছু নয়) কিন্তু আপনি যদি সেই সময়ে মানুষকে একদম নতুন কোনও বাহন এনে দিতেন (ধরুন আপনি গাড়ি আবিষ্কার করলেন) – তাহলে সেই উন্নতিকে বলা হবে ০ থেকে ১ এ যাওয়া – অর্থা‌ৎ জিরো টু ওয়ান।

সুতরাং পৃথিবীর বুকে পরে যে “বিল গেটস” আসবেন তিনি অপারেটিং সিস্টেম বানাবেন না ; পরবর্তী “জুকারবার্গ” সোস্যাল মিডিয়া বানাবেন না; পরের “ল্যারি পেজ” গুগোলের মতো সার্চইঞ্জিন বানাবেন না; পরের “স্টিভ জবস” পৃথিবীর প্রথম বাটন বিহীন স্মার্টফোন বানাবেন না, তিনি হয়ত এমন স্মার্টফোন ডিজাইন করবেন, যেটা হয়তো হাতে ধরে রাখারও  প্রয়োজন হয় না।

নীতি ০২: প্রতিযোগীতা এড়িয়ে চলুন:

জিরো টু ওয়ান বইয়ে “পিটার থেইল” বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা আসলে বিষের মত কাজ করে। তাঁর মতে capitalism এবং competition একে অপরের বিপরীত। প্রথমটি আপনাকে ব্যবসায় লাভ করতে সাহায্য করবে, দ্বিতীয়টি আপনার ব্যবসার ক্ষতি করবে। সুতরাং  বাজারে আপনার পন্য বা সেবার ক্ষেত্রে যত বেশি প্রতিযোগীতা থাকবে, আপনার আয় ততই কম হবে। ছোট বড় সব ব্যবসারই এই অবস্থা।

নীতি ০৩ : একটি নির্দিষ্ট ক্রেতা শ্রেনীকে টার্গেট করে শুরু করুন:

আপনি হয়তো অনেকবারই এই কথাটি শুনেছেন “একবারে খেতে চাইলে কিছুই খাওয়া যায় না”। – কথাটা শুনতে শুনতে গুরুত্বহীন হয়ে গেলেও কথাটা কিন্তু ১০০% সত্যি।

Amazon .  com এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের পন্য কিনতে পাওয়া যায়। বর্তমানে অন্য অনেকগুলো কোম্পানী এই সেবা দিচ্ছে, এবং জ্যাক মার Alibaba . com এর মত কিছু কিছু কোম্পানী অনেক ভালোও করছে। কিন্তু ২ নং নীতি অনুসারে আমাজন সবার প্রথমে এই ব্যবসা শুরু করায় এখনও তাকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। এই আমাজনের উদ্যোক্তা “জেফ বেজোস” কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

ছোট একটি মার্কেট বা কনজ্যুমার গ্রুপের এমন একটি ছোট সমস্যা খুঁজে বের করুন যার সমাধানে আপাতত কেউ এগিয়ে আসছে না। তার মানে

০১. এখানে আপনার একদম নতুন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে;

০২. এখানে কোনও প্রতিযোগীতা নেই;

০৩. মার্কেটটি ছোট, তাই আপনি অল্প অল্প করে আপনার ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন।

সমস্যাটির একটি সুন্দর সমাধান নিয়ে আসুন, দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি আরও বড় ক্ষেত্রে হাত দিতে পারছেন।

একটি বড় পুকুরে কোনও ছোট মাছ গিয়ে পড়লে, বড় হয়ে ওঠার আগেই অন্য বড় মাছগুলো তাকে খেয়ে ফেলে । কাজেই একটি ছোট পুকুরে গিয়ে ধীরে ধীরে বড় মাছ হয়ে পরে বড় পুকুরে ঝাঁপ দেওয়াটাই  বুদ্ধিমানের কাজ। জিরো টু ওয়ান বুক পিডিএফ পেতে আমাদের ফেজবুক পেইজ এ মেসেজ দিতে পারেন।

জ্যোতির্ময়ী সাহা (জ্যোতি),

৭ম সেমিস্টার,

সিএসই ডিপার্টমেন্ট!

jyotirmoyisaha14@gmail.com

Jyotirmoyi Saha
0Shares
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর স্যালারি Previous post সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর স্যালারি কত?
বাবু খাইছো Next post সাইন্স ফিকশন ফর “বাবু খাইছো, বাবু খাইছো?”
Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ