অনেক কম্পিউটার সাইন্স শিক্ষার্থী আছেন, যারা ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ইনকাম করতে চায়। কিন্তু কোন সিএসই শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং এর সাথে জরিত হওয়া উচিৎ নয়। কেন উচিৎ নয় সেটা নিয়েই আজকের ব্লগ।

আমি নিজে ফ্রিল্যান্সিং করেছি স্টাডি এর সাথে সাথে। তাই, এ ব্যাপারে রিয়েল লাইফ অভিজ্ঞতা আছে আমার। অন্তত আন্ডার গ্রাজুয়েট লাইফ এ, সিএসই শিক্ষার্থীদের ভুলেও ফ্রিল্যান্সং এর সাথে জরিত হওয়া উচিৎ নয়। এই ব্যাপারের ব্যাখ্যা করছি আগে। আর আমি নিজেও একজন ফ্রিল্যান্সার ছিলাম, সেই কারন ব্যাখ্যা করছি শেষ দিকে।

ভার্সিটি লাইফ হচ্ছে শেখার সময়! যত শিখবেন তত আপনার ভালো হবে- গালিব নোটস

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইলে, একেবারে শুরুতেই আপনাকে একটি মেজর স্কিল নিয়ে কাজ করা লাগবে। এবং একটি মেজর স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা লম্বা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। শুধু একটি জিনিশ শেখা যায় না। সাথে সাথে অনেক কিছু শিখতে হয়। যেমন, লারাভীল শেখার জন্য প্রথমে, HTML, CSS দেন PHP দেন ফাইনালি, লারাভেল শিখতে হয়।


এতে অনেক সময় সিএসই শিক্ষার্থীদের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। যাদের ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা নেই, তারা এমনও হতে পারে যে, লেখা-পড়া সম্পুর্ন বাদ দিয়ে শুধু কাজে সময় ব্যয় করতে পারেন

নেক্সট হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করাই কিন্তু শেষ কথা নয়। যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন, তখন এটা ম্যানেজ করতে প্রচুর সময় নষ্ট হবে। যেটা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কঠিন কাজ। যদি না আপনার হাইলি ম্যানেজ এবল স্কিল থাকে, আপনি কিন্তু ট্রুলি হাড়িয়ে যাবেন। লেখা-পড়ার ব্যাপক ক্ষতি হবে।

৩ ধরনের মানুষের কোন ভাবেই উচিৎ না, ফ্রিল্যান্সিং চেষ্টা করার!

এর বাইরে, ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং করা কিন্তু প্রচন্ড প্রেশার এর একটি কাজ। যেমন ধরেন, এমন হতে পারে, আমেরিকান কোন ক্লায়েন্ট এর সাথে রাত ৩টায় মিটিং, সকাল ৭টা অস্ট্রেলিয়ান ক্লায়েন্ট এর সাথে মিটিং। আবার সকালে হয়ত আপনার ক্লাস থাকতে পারে। তো এই প্রেশার হ্যান্ডেল করা অনেক কঠিন।

শিক্ষা জীবনে যদি আপনি এত বেশী প্রেসার নিয়ে ফেলেন, তাহলে কম্পিউটার সাইন্স এর মুল স্কিল এর দিকে ফোকাস হতে পারবেন না। যেটা আপনার জন্য অনেক বেশী ক্ষতিকর হবে। এটা বুঝবেন, ফ্রেস গ্রাজুয়েট হওয়ার পর, জব খুজার সময়।

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, যখন আপনি ফ্রিলান্সিং শুরু করবেন, একেবারে শুরুতেই কিন্তু আপনি অনেক ইনকাম করতে পারবেন না। শুরুতে হাই কোয়ালিটি থাকবে না। এমনও হতে পারে, আপনি মিসলিডিং কোন ক্যাটাগরিতে কাজ শুরু করতে পারেন। যেমন ধরেন, ডেটা এন্ট্রি, ওয়েব রিসার্চ ইত্যাদি কাজ তুলনা-মুলক সহজ।

এই কজা গুলো মার্কেট এ বেশি থাকে। এখন, এই কাজ গুলো যদি চার পাচ বছর করেন, এমনকি ১০ বছরও কররেন, তাহলে সেটা তো আপনার সিএসই এর মুল ধারার জব পেতে সাহায্য করতে পারবে না। আর মেজর স্কিল তো আপগ্রেড হবেই না। ফাইন্যান্স এ কিছুটা উপকার হলেও, আল্টিমেট উন্নতি কিন্তু হচ্ছে না।

বেকার ফ্রিল্যান্সার হচ্ছেন না তো? নতুন ফ্রিল্যান্সারদের ৯৯ ভাগ বেকার!

ধরেন, ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি ভার্সিটি লাইফ এ মাসে ২০০ ডলার করে ইনকাম করলেন। এতে বছরে ইনকাম হলো ২৪০০ ডলার কিন্তু স্কিল আপ হলো না। যার কারনে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে ৬মাস বেকার থাকলেন। তাহলে ৬ মাসে মোর অর লেস ৪-৫০০০ ডলার লস হবে। আর গ্রাজুয়েট বেকারত্ব যে কি প্রেশার এর, চিন্তাও করতে পারবেন না।

ক্ষতি কি হবে সেটা তো জানলেন এখন চলেন দেখে নেই, কম্পিউটার সাইন্স এ লেখা-পড়ার পাশা-পাশি আমাদের কি করা উচিৎঃ

সবার শুরুতে প্রবলেম সলভিং এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হতে পারে কন্টেষ্ট প্রোগ্রামিং, বা রিয়েল লাইফ প্রবলেম, স্টক অভারফ্লো এর মত সাইট গুলোতে পোস্ট হওয়া প্রবলেম এর সমাধান করা। আমরা সফটওয়্যার কোম্পানিতে কিন্তু সব সময়, সমস্যা এর সমাধানে কাজ করি। আর সমস্যা গুলো কিন্তু আনস্ট্রাকচার্ড। যত বেশী সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, তত এগিয়ে যাবেন।

এর পর নজর দেয়া উচিত, ডেটা স্ট্রাকচার, এলগোরিদম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিকে। এই কোর্স গুলো ডিপলি আন্ডারস্ট্যান্ড করা এবং পর্যাপ্ত এপ্লিকেশন দক্ষতা অর্জন করা।

এর বাইরেও যদি, নিজের কোন আইডিয়া থাকে বা স্টার্ট-আপ প্ল্যান থাকে, সতর্কতার সাথে সেগুলা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কারন এ সময় ফ্রেন্ড, সিনিয়র বা জুনিয়র রা থাকে। টিচারদের অনেকে মেন্টর থাকেন।

যদি, সিএসই পড়ার সময়, ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং, ডেটা এন্ট্রি এর কাজ গুলোতে ফোকাস না করে, উপরে উল্লেখিত দিকে নজর দেন, তাহলে আপনার গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরি পাবেন। আর সেই চাকরি থেকে যে স্যালারি পাবেন, সেটা আপনার এই সামান্য ফ্রিলায়ন্সিং এর লস থেকে অনেক বেশি হোবে।

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

আর যদি, ফ্রিল্যান্সিং করেন, ট্রিমেন্ডাস প্রেসার এর মধ্য দিয়ে ক্লাস করেন, কুইজ না দেন ঠিক করে, তাহলে কিন্তু গ্রাজুয়েশন শেষ করে, বেকার হয়ে যাবেন। বিশেষ করে, যারা বেসরকারি ভার্সিটিতে, কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এ স্টাডি করেন, অনেক টাকা দিয়ে পড়তে হয়। এখন এত টাকা দিয়ে পড়ে যদি চাকরি না পান, তাহলে কি সমস্যায় পড়বেন চিন্তা করতে পারবেন?

এত ইনভেস্ট করে যদি বেকার ই থাকেন, তাহলে নিজের সমস্যা হবে, ফ্যামিলির সমস্যা হবে। তাই না? আমি আমার আশে-পাশে অনেক সিএসই স্টুডেন্ট দেখি যারা ডেটা এন্ট্রি বা ওয়েব রিসার্চ, স্টক ফটো সেল করে ফ্রিল্যান্সিং করেন। যেটা কোন ভাবেই, একজন সিএসই স্টুডেন্ট এর জন্য উপযোগী নয়।

এবারে আসি, আমি নিজে কেন ফ্রিল্যান্সিং করেছিলাম কম্পিউটার সাইন্স এর স্টাডির পাশা-পাশিঃ

প্রথম কারন হচ্ছে, ওয়েব ডিজাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ গুলো আমি শিখেছি গ্রাজুয়েশন শুরু করার আগে। আমার এইচএসই পাশ করার পর শেখা শুরু করেছিলাম। ইয়ার গ্যাপ ছিল। আর কাজ শুরু করেছিলাম, সেটাও ক্লাস শুরু হওয়ার অনেক আগেই।

দুই নাম্বার কারন হচ্ছে, ওই সময় ফ্রিল্যান্সিং ছাড়া আমার কাছে বেটার কোন সলুশন ছিল না। আপনার জানেন, বেসরকারী ভার্সিটিতে পড়তে অনেক টাকার দরকার হয়, যেটা অন্য কোন ভাবে ম্যানেজ করা প্রায় অসম্ভব।

সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!

ওই সময়ে আমাকে গাইড করার কেউ ছিল না। দেখেন, আমি যখন ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার এ উঠি, বুঝতে পারি ফ্রিল্যান্সিং আমার থেকে অনেক সময় নিয়ে নিচ্ছে, পাশা-পাশশি আমাকে ট্রিমেন্ডাস প্রসার এর মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তখন আমি ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দিয়েছি।

এর পরেও হয়ত, সিএসই শিক্ষার্থীদের অনেকে আমার মত নিরুপায় হয়ে, ফ্রিল্যান্সিং করার চেষ্টা করবেন। আপনাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনারা এমন কাজ করবেন যেটা যেটা প্যাসিভ। আপনার স্টাডি হ্যাম্পার করবে না। চাইলে আমার ফ্রিল্যান্সিং ব্লগ টেক এলার্ট বাংলা পড়ে দেখতে পারেন। 

0Shares
I left my last job, why? Career Advice Bangla, galibnotes Previous post সিটিও জব ছেড়ে দিলাম যে কারনে! সতেজ লাইফ থেকে রিজাইন!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মওকুফ করা উচিৎ?, galib notes Next post করোনা মহামারিঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মওকুফ করা উচিৎ?

5 thoughts on “যে কারনে সিএসই শিক্ষার্থীদের ভুলেও ফ্রিল্যান্সিং এর চিন্তা করা উচিৎ না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ