উগান্ডার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হয়েছে অনেক আগেই। শুধু মাত্র “নন-প্রফিট” কথাটি লিগ্যাল রাখার জন্য প্রফিট উথড্র এর সিস্টেম কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানেই ফ্যামিলি বিজনেস অথবা শেয়ারড বিজনেস। সেই প্রসংগে কিছু বলতে চাই না, ইন ফ্যাক্ট বলে লাভও নাই। প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা মহামারিতে এ সব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কি কিছুটা সদয় হওয়া উচিৎ?

পুরো-লেখাটি কিছুটা উগ্রবাদি রম্য লেখা। তাই যারা অন্যর মতামত কে শ্রদ্ধা করতে পারেন না, বা মতের বিরুদ্ধে গেলেই রেগে যান, তাদের কে এই লেখাটি পড়তে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, লেখাটি একান্তই আমার ব্যাক্তিগত রম্য রচনা। এখানে মুল লেখা খুবই অল্প আর বাকিটা আজাইরা আলাপ।

করোনা মহামারির একেবারে শুরুতে যখন উগান্ডার সরকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে, সব গুলো বিশ্ববিদ্যালয় সেটা মেনে নেয় এবং ক্লাস গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। উগান্ডার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় অংশ (৫০-৭০%) ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থী যারা এ সময় বাড়িতে চলে যায়। ক্লাস না থাকলে, বাড়ী যাবে এটাই স্বাভাবিক।

নাটক আর সমস্যা শুরু হয় সপ্তাহ যেতে না যেতেই। অনলাইন ক্লাস এর নামে এক বিশাল নাটক মঞ্চস্থ শুররু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। ক্লাস গুলো কে নাটক বলাতে যাদের কষ্ট লাগছে তাদের বলছি,


১-২ দিনের নোটিশে কিভাবে একটা ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে গেল? ক্লাস শুরু করার জন্য একটা ফেজবুক পেইজ থেকে পোস্ট দিয়েই শেষ? যারা গ্রামে চলে গেছে তাদের চিন্তা একবারও মাথায় আসল না? যারা শহরে আছে তারাই বা স্বাভাবিক আছে সেটা কি নিশিচত?

কোন রকম ট্রেইনিং, গ্লোমিং ছাড়া এভাবে অনলাইন এ ক্লাস শুরু করার নজির মনে হয়, উগান্ডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোই প্রথম এবং এটা অবশ্যই গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দাবি করে। টিচার রা যে যার ইচ্ছা মত ক্লাস নিচ্ছে, কারও কথা বুঝা যাচ্ছে না, কারও স্লাইড লোড হচ্ছে না, কেউ আবার এমন একটি পুরাতন আমালের সফটওয়্যার ইউজ করছে যেটার নাম বললেও সম্মান চলে যায়।

অনলাইন ক্লাসের নামে এই যে মিস-ম্যানেজমেন্ট, আমি আমার ২৩ বছরের জীবনে আর কোনদিন দেখি নাই। এখানে অবশ্য আমি টিচারদের থেকেও, উগান্ডার মাথা মোটা ব্যাবসায়ীদের দোষ বেশি দিব। কারন, টিচারদের বেশির ভাগ সময় তেমন কিছু করার থাকে না।

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

ক্লাস এ কানেক্ট হোক বা না হোক, ইন্টারনেট কানেক্ট থাকুক না থাকুক, ক্লাস চলবে। এবং কয়েকদিনের মধ্যই দেখলাম, সব প্রতিষ্ঠান তাদের সিলেবাস কভার করে ফেলেছেন। ওমাই গড। এই ক্লাস শেষ করাটাও কিন্তু গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দাবি করে।

এখানে যেটা সব থেকে বেশি লক্ষ্যনীয়, ১-২ সপ্তাহ গ্যাপ থাকার পর অনলাইন এ ক্লাস শুরু হলো এবং আগের ডেডলাইন এ সিলেবাস শেষ হয়ে গেল কিভাবে? কোন রকম অতিরিক্ত ক্লাস ছাড়াই ব্রেক এর ক্লাস গুলোর পড়া শেষ হয়ে গেল কিভাবে? একটা নতুন সিস্টেম কোন রকম ট্রায়াল ছাড়াই কিভাবে ইন্ট্রিগেট হয়ে গেল?

অংক মিলায় দেই চলেন! নির্ধারিত ক্লাস শেষ না হলে ফাইনাল পরিক্ষা নেয়া সম্ভব না। যদি ঠিক সময়ে ক্লাস শেষ না হয়, তাহলে পরিক্ষা পিছিয়ে যাবে। আর যদি ফাইনাল না হয়, ব্যাবসায়ে লস। আর যাই হোক, ব্যাবসাতে লস মেনে নেওয়া যায় না। তাই, বাস্তবতা যাই হোক, শিক্ষার্থী কিছু বুঝুক না বুঝুক, দুনিয়া মহামারিতে ধ্বংস হয়ে যাক, সিলেবাস ঠিক সময়ে শেষ করা হবে।

বাই দ্যা ওয়ে, অনলাইন এ কোন ব্যাবহারিক ক্লাস হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সাবজেক্ট গুলোতে যেখানে ব্যাবহারিক জ্ঞান কে সর্বচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ সেখানে আমরা শুধু মাত্র একটা ক্রেডিট হিসাব করে রেখেছি। যেটা একেবারে স্পস্ট ফুটে উঠেছে এই কোভিড১৯ আউটব্রেক এ।

অর্ধেক ব্যাবহারিক ক্লাস ছাড়াই একটা সেমিস্টার শেষ! এটাও কিন্তু গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দাবি করে।

চলেন সামনে আগাই। বাংলাদেশে একটা থিয়েটার স্টেইজ আছে। উগান্ডারজিকি না কি যেন নাম। এখানে, সকাল বিকাল বিভিন্ন ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। এরা নাকি দেশের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর শীর্ষ সংগঠন! তো এরা কি করে, সকালে বলে অনলাইন ক্লাস করা যাবে না- বিকালে বলে করা যাবে। রাতে বলে পরিক্ষা নেয়া যাবে না, সকালে বলে নেয়া যাবে।

এই প্রতিষ্ঠানের নাটকের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মেরুদণ্ড ছাড়াই একটা প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, সেটাও কিন্তু বিশ্বের কাছে রোল মডেল হওয়া উচিৎ। সেই সাথে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তো অবশ্যই।

ফাইনালি, ফাইনাল পরিক্ষা আসল। কেউ কেউ বললো পরিক্ষা হবে আবার কেউ বললো নাহ। কেউ বলল ভাইভা হবে, কেউ বললো নাহ। এভাবেই চলতে থাকল কিন্তু এভাবে চললে তো ব্যাবসায়ে লস। তাহলে সমাধান কি? ফাইনাল হোক না হোক, নতুন সেমিস্টার শুরু করে দাও।

নতুন সেমিস্টার মানেই তো সেমিস্টার ফিস/টিউশন ফিস। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহামারির সময়ে, যখন লাইফ নিয়ে কনসার্ন, সেখানে টিউশন ফিস কিভাবে দিবে? আর টিউশন ফিস বা রেজিস্ট্রেশন ফিস দিয়ে কি আবার অনলাইন ক্লাস নাটকের অংশ হতে হবে?


কাউন্টার যে প্রশ্ন গুলো আপনি ভাবছেন সেটা হচ্ছে, তাহলে কি ভার্সিটি গুলো ফ্রিতে পড়াবে? আর ফ্রি পড়াইলে টিচারদের বেতন দিবে কিভাবে? আর শিক্ষার্থীরা কি জানত না টাকা দেয়াই লাগবে?

আচ্ছা থামেন, এক এক করে বলছি। শুরুতেই বলি, কোন শিক্ষার্থী ফ্রিতে পড়তে চায় নি। ইন ফ্যাক্ট শিক্ষার্থীরা যখন বেসরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়, তারাও জানে, এখানে ফ্রিতে পড়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এই যে মহামারি, এতে করে কিন্তু শুধু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে তা নয়।

জীবনে সফল হওয়ার ১৩ টি সিক্রেট বা কৌশল!

একই সাথে অন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কৃষি, গাড়ী ও বন্ধ। আর সরকারী প্রতিষ্ঠান বা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান এর অনেক যায়গা বেতন আটকে আছে। তাহলে আমাকে বলেন, যে শিক্ষার্থীর বাবা সামান্য আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, সে কিভাবে সন্তানের জন্য পে করবে। অথবা বলেন তো, যে ঢাকাতে টিউশন করে পড়া-লেখা করে সে কিভাবে দিবে?

এখানে প্রশন আসবে, সমস্যায় থাকা স্টুডেন্ট এর সংখ্যা কত পারসেন্ট। তর্কের খাতিরে মেনে নিচ্ছি, সেটা মাত্র ১% । কিন্তু এই ১% এর উপর ইনজাস্টিজ করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? তাদের জন্য কি বিকল্প ব্যাবস্থা করা যেত না? আর বাস্তবতা হচ্ছে অন্তত ৪০% স্টুডেন্ট মহামারিতে সাফফার করছে।

শুধু ফার্মেসি এবং কম্পিউটার সাইন্স এর বাইরে সব ধরনের কাজের গতি ৫০-৯৯% কমে গেছে। অনেকে ইতিমধ্য চাকরি হারিয়েছে। যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। এসব চিন্তা কি কেউ করবে?

সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!

তাহলে সমধান কি টিউশন ফিস এর? এটা খুবই সিম্পল। ফিস গুলো পরে নেয়া যেতে পারে। পরের সেমিস্টার এ এক সাথে চাপ হয়ে যাবে, তাই আস্তে আস্তে ইনস্টলমেন্ট এ নেয়া যেতে পারে। আর বিভিন্ন ফাইন হয়ে থাকে লেইট ফি তে, সেগুলা মউকুফ করে দেয়া যেতে পারে। কারন, এটা তো খুব স্বাভাবিক যে এক সময় ঝড় থেমে যাবে, প্রৃথিবী আবার সুস্থ হবে আর কাজের সুযোগ তৈরি হবে। সবাই তখন পে করতে সক্ষম হবে।

তাহলে, টিচারদের বেতন দিবে কিভাবে? টিচারদের বেতন যে কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনর খরচ গুলোর একটি। উগান্ডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে টিচারদের থেকে যে পরিমান সার্ভিস নেয়া হয় সে তুলনায় বেতন কত কম সেটা বলার মত না। তবে উগান্ডার ভার্সিটি গুলোর অন্যান্য খরচ কিন্তু আবার অনেক বেশি।

উগান্ডার টিচার রা যত কম বেতনে চাকরি করেন, সেটা আশ্চর্য লাগে আমার কাছে। আমি দেখেছি, অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা কিনা একজন ফ্যাকাল্টির 3x-4x ইনকাম করে থাকে।

এখানে একটা কিন্ত রয়েছে। মুল ধারার ফ্যাকাল্টিরা খুব সামান্য বেতন পেলেও, ভার্সিটির কিছু উপর মহলের লোক-জন আছে, তারা কিন্তু আবার ঠিক ই কামিয়ে নেয়। এটা আসলে বেতন না বলে, ব্যাবসায়িক প্রফিট বলা যেতে পারে। আর সেই সব গুলো এভারেজ করে, বেতন কে বাড়িয়ে দেখানো হয়।

একটা আম বাগানে ১০জন মানুষ ঢুকল। তাদের মধ্য ১ জন গাছে উঠে একাই ১০টা আম পেড়ে আনল আর তার বন্ধুকে ২টা আম দিল। বাগান থেকে বের হওয়ার পর এভারেজ এ সবাই কয়টা করে আম পেল?

করোনার বন্ধের মধ্য ভার্সিটি গুলোর অনেক খরচ কাট-অফ করা হয়েছে। সেটা দিয়ে কি ব্যালেন্স করা যেতে পারত? আর যদি সেটা না থাকে তাহলে ভার্সিটি গুলোর সেভিংস থেকে টিচারদের বেতন দেয়া যায়। এখন সেভিংস যদি না থাকে, তাহলে কোটি কোটি টাকার ইনকাম যায় কোথায়?

ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রা প্রফিট তুলে নেয় নিয়মিত। তো তারাও তো অন্তত এই সময়ে এসে শিক্ষকদের পাশে- শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়াতে পারত?

যে ৭ ধাপে একজন সিএসই শিক্ষার্থীর পতন ঘটে!

লাস্টলি, শিক্ষার্থীরা এত বোকা না যে, তারা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে এসে ফ্রি সব এক্সপেক্ট করবে। তবে, কোভিড১৯ আউটব্রেক হঠাতই হয়েছে। এটা কারও ধারনাও ছিল নাহ। সে জন্য সসবাই চায়, সবার যায়গা থেকে একটু সদয় হোক।

আমাদের নিজেদের একটা বড় সমস্যা কি জানেন? আমরা নিজেদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই সেটা গ্রহন করি না! আমাদের জুনিয়র কেউ কিছু বললে সেটা গ্রহন করি না। আমাদের স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আসংকা থাকলে সেটা গ্রহন করি না।

এই যে আমারা জাতি হিসাবে দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে একটি দেশ! এর দায় কার? এ দায় উগান্ডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর। এ দায় এখানকার যুব সমাজের, এ দায় উগান্ডার ডিসিশন মেকারদের।

সমস্যা সমাধানে আমাদের কথা বলার স্বাধিনতা দিতে হবে। সমালোচনা কে গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যা থাকলে সেটা তো মানতে হবে। সমস্যা আছে সেটাই যদি না মানি তাহলে কিভাবে সেটা সমাধান করব?


যা হোক, এত কিছু বলার কারন হচ্ছে, এই পোস্ট কেউ শেয়ার দিবেন  না। কারন এগুলা আপনার ভালো লাগে নি। উগান্ডার প্রতিষ্ঠান কে ব্যাবসা বলা হয়েছে। কাওকে ওয়েলিং করা হয় নি। কোন হুজুর কে মিথ্যা প্রসংসা করা হয় নি।

কিন্তু এভাবে আর কত দিন? কথা না বলতে বলতে তো বোবা হয়ে যাচ্ছেন! আপনি কথা না বললে সমস্যা চিরস্থায়ী হবে। একদিন আপনার বাচ্চারা সেই সমস্যাতে বলি হবে। সহ্য করতে পারবেন তো?

নাও, অন এ সিরিয়াস নোটঃ কোয়ারেন্টাইন এর সময় কাটাতে এই রম্য গল্পটি লেখা। এই গল্পের সাথে দেশের কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর বাস্তবিক কোন সম্পর্ক নেই। যদি কেউ সম্পর্ক খুজে পান, সেটার দায়, লেখব বা প্রকাশকের নয়। সুথ থাকুন, বেঁচে থাকুন। আর এত সুন্দর রম্য গল্প লেখার জন্য আমিও কিন্তু গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দাবি করি!

0Shares
যে কারনে সিএসই শিক্ষার্থীদের ভুলেও ফ্রিল্যান্সিং এর চিন্তা করা উচিৎ না, Galib Notes Previous post যে কারনে সিএসই শিক্ষার্থীদের ভুলেও ফ্রিল্যান্সিং এর চিন্তা করা উচিৎ না
সিএসই নাকি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নাকি আইটি, galib notes Next post সিএসই নাকি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নাকি আইটি?

3 thoughts on “করোনা মহামারিঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মওকুফ করা উচিৎ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close

গালিব নোটস এর ইউটিউব ভিডিওঃ