কম্পিউটার সাইন্স এ ভর্তির আগে কি করা উচিৎ সেটা নিয়ে আমাদের অনেগ গুলো ব্লগ আছে। সেগুলো দেখে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তির পর কি করা উচিৎ? অনেকে প্রথম, ২য় সেমিস্টারে মেসেজ দিয়ে, করনীয় কি বুঝতে পারে না। তাদের এই যে জানার আগ্রহ, সেটার জন্যই আজকের ব্লগ।
এই ব্লগে এমন কিছু সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যেটা সাধারনত অন্যরা বলেন না। ব্লগের মতামত সবার নাও ভালো লাগতে পারে। তবে এই ব্লগে লেখা সব কিছু রিয়েল লাইফ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে!
এই ব্লগটি মুলত যারা একেবারে প্রথম দিকে আছেন, বা যারা ভর্তি হবেন তাদের জন্য। যারা সিনিয়র ইয়ার এ আছেন তারা এর বেশির ভাগ ইতিমধ্য জানেন। তবুও পড়ে দেখতে পাররেন! কিছুটা সার্কাস্টিক মনে হলেও, তথ্য গুলো বাস্তব। ব্লগটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার দিতে পারেন যাতে করে তারাও এই তথ গুলো জানতে পারে।
ভর্তির সাথে সাথেই প্রোগ্রামিং শুরু করুন
কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তির পর প্রথম এবং সব চেয়ে গুরুত্বপুর্ন কাজ হচ্ছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করা। অনেকে বলেন, শুরুতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরুর দরকার নাই। অনেকে আবার মজা করে বাংলা ছবির গানের মত বলেন, ফার্স্ট ইয়ার ড্যাম ইয়ার। এ ধরনের কথায় কান না দিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করা উচিৎ।
যত দ্রুত শুরু করবেন তত ভালো। কারন লেট করলে আপনি কম সময় পাবেন প্রস্তুত করার জন্য। আর শুরুর দিকে একাডেমিক প্রেশার থাকে না বললেই চলে। তাই এই সময়টাতে বেসিক জিনিস জানার জন্য প্রচুর সময় দিতে পারবেন সহজে। শুরুতে আপনি সি প্রোগ্রামিং বেসিক দিয়ে শুরু করতে পারেন।
কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে শুরু করবেন বা কোন ল্যাংগুয়েজ ভালো এত সব চিন্তার কিছু নাই। শুরু করে দিন, বেসিক জিনিস ঘাটতে থাকুন। দেখবেন, অনেকে কলেজ এমনকি হাইস্কুল লেভেল থেকে প্রোগ্রামিং করে। সে কারনেই, শুরুতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে নিজের চিন্তা করুন। শুরুর সেমিস্টার গুলোতে এটা কঠিন হলেও অসম্ভব না।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের শুরুর ২ সেমিস্টার এর বেশির ভাগ সময় কম্পিউটার ল্যাব এ কাটিয়েছি। এতে করে আমার বন্ধুর অভাব হয় নি। বা আমার বিশ্ববিদ্যায় থেকে, সমাজ থেকে নাম কাটা যায় নি। উলটা আমার পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই চাকরি করেছি।
আপনি আগে শুরু করেন নাই মানে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। তাই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করুন এখনই। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ ভালো করার জন্য কিছু পরামর্শ দেখতে পারেন এই ব্লগ এ। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করা মানে এই না যে, আপনাকে কন্টেস্ট এ টপ হতে হবে বা কোড ফোর্স এ রেড কোডার হতে হবে। আপনার ফোকাস থাকবে শুরু করা এবং ইনভল্ভ থাকা।
শুধু কম্পিউটার সাইন্স এর শিক্ষার্থী না, যে কোন মানুষ যে কোন স্টেইজ এ থাকেন না কেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা এখন অন্যতম গুরুত্বপুর্ন কাজ। মনে রাখবেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা মানে আপনি দুনিয়ার সাথে ফিট! কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর জন্য কোন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে শুরু করবেন সেটা নিয়ে কনফিউজড হওয়ার কিছু নাই। শুরু করুন আর ফোকাস থাকুন বেসিক শেখার ব্যাপারে!
এভয়েড বিয়াদব প্রোগ্রামার সিনিয়র
কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তির পর তো বটেই, যে কোন শিক্ষার্থীর জন্য এই টিপসটি দরকারি। ভার্সিটি তে ভর্তির পর এক শ্রেনীর সিনিয়কে এভয়েড করতে হবে। না হলে ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি। এভয়েড করুন তাদের যারা নিজেরা সিদ্ধান্ত দেয়।
লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেক সিনিয়র আছে, যাদের কাছে পরামর্শ চাইলে বলবে, এটা কর, ওটা কর। তাদের ভাষ্য মতে, তাদের কথা শুনলে লাইফে সাক্সেস না শুনলে ব্যার্থ। এবং এই সিনিয়র রা সাধারনত তাদের নিজের ডোমেইন এর বাইরে আর কিছু বলে না। আপনাকে ভাবতে শিখায় না, সিদ্ধান্ত নিতে শেখায় না। তারা আপনাকে ফলোয়ার বানায়।
আপনাকে বুঝতে হবে, লাইফে সফলতার জন্য লিডার হতে হবে! ফলোয়ার হলে হবে না।
তাই বলে, এই টিপস থেকে সকল সিনিয়রদের কে এভয়েড করবেন না। সিনিয়র থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। স্পেশালি ভালো সিনিয়র হলে,তাকে মেন্টর হিসাবে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার ক্যারিয়ার বুষ্ট করার সম্ভাবনা থাকবে।
রেজাল্ট ফোকাস করুন
কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তির পর অনেকে বলে, রেজাল্ট ম্যাটার নাহ। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, এই কথাটি কারা বলে, যাদের নিজেদের রেজাল্ট বাজে। এই ব্যাপারে এই ব্লগটা দেখতে পারেন। অনেক আগে লিখছিলাম- সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার? মিসলিডিং নাকি রিয়েলিটি!
ভিডিও এবং ব্লগের সামারি হচ্ছে, সিজিপিএ যত ভালো, আপনার পরবর্তী লাইফ তত সহজ হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে, সিজিপিএ অর্জন করার জন্য কোন ভাবেই শুধু মুখস্ত করার দিকে ঝুকে যাওয়া যাবে না। তাহলে আপনার রেজাল্ট কোন কাজে আসবে না।
ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুকবেন না
কম্পিউটার সায়েন্স এর একাডেমিক পড়া-লেখা শুরু করলে দেখবেন, প্রচুর ছেলে মেয়ে আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেই লাখ টাকা কামায় ফেলতেছে। আমি নিজেও এমন করেছি। ভার্সিটি শুরু করার আগে আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি। আর সেমিস্টার শুরুর দিকে আমি যা কামাইতাম সেটা একজন এসিস্ট্যান্স প্রফেসর এর বেতনের কয়েক গুন।
কিন্তু এতে করে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি ফ্রিল্যান্সিং থেকে ফিরে এসেছি। কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থীদের কেন ফ্রিল্যান্সিং করা উচিৎ না সেটা নিয়ে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
ভিডিও এর সামারি হচ্ছে, আপনি যতই টাকা কামান না কেন, সেটা আপনার ফিউচার ইনকাম এর তুলনায় খুব সামান্য। আপনি যদি এখন ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ১ হাজার ডলার ইনকাম করতে পারেন, ভালো কম্পিউটার সায়েন্স শিক্ষার্থী হলে মাসে ১ লাখ ডলার, জ্বি, ১ লাখ ডলার ইনকাম করতে পারবেন।
- কম্পিউটার সায়েন্স ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিভাসিটির ৪ বছর যা যা শেখা উচিৎ
- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার করে কি আসলে?
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আপনার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে। আপনার একাডেমিক অবস্থা খুব বাজে অবস্থায় চলে যেতে পারে। আপনি প্রবেশনে পড়তে পারেন। আপনার স্বাস্থ ভেজ্ঞে পড়তে পারে। বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে।
রিলেশনশিপ পাবলিক করবেন না
কম্পিউটার সায়েন্স এ যে সব মেয়েরা পড়ে, তাদের অধিকাংশ কেন পড়ে নিজেরাও জানে না। অবশ্যই কিছু মানুষ জানে, তারা ভালোও করে। বাকীর আসেই একজন ভালো জামাই কিনতে। একটা কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি মানেই একজন ভালো জামাই। কথাটা আপনার ভালো না লাগলেও এটাই বাস্তব।
ভালো করে নোটিশ করলে দেখবেন মেয়েদের বেশির ভাগ বলে, কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকতে ভালো লাগে না, এসি ল্যাব এ মাথা ব্যাথা করে। শুরুর দিকে কিছুদিন চেপে গেলেও, কয়েক সেমিস্টার যেতে না যেতেই, এই কথাগুলো সামনে চলে আসে। আরে আপা, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবেন আর কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকবেন না? এটা কি জোক?
লেখক নিজেও কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থী ছিলেন এবং প্রচুর ছেলে মেয়ের সাথে মিশেছেন। মেয়েরা ডিগ্রি দেখিয়ে জামাই কিনতে আসে এই কথাটা সত্য। এখন সেটা মানবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার।
এবারে আসি, পাবলিক ভাবে রিলেশনশিপ কেন করবেন না? কারন হচ্ছে, সম্পর্ক যদি পাবলিক হয়ে যায়, কিছু সমস্যাতে পড়বেন। প্রথমত, আপনার পার্টনার যখন বদলে যাবে, সেটা পাবলিক ভাবে এক্সপ্রেস করতে পারবেন না। দেখা যাবে, আপনার জিএফ এক্স হয়ে গেছে কিন্তু সবার সামনে অভিনয় করতে হচ্ছে যে, স্টিল আপনারা সম্পর্কে আছেন।
বা এমন হতে পারে, আপনার জিএফ এক্স হয়ে গেছে। অন্য সম্পর্কে জরিয়েছে কিন্তু সেটা আপনার বন্ধুরা জানে না। তখন তারা ক্রমাগত পিঞ্চ করে যাবে। আপনি কিছু করতে পারবেন না। যেহেতু অনেক মেয়েই সম্পর্কে যাবে শুধু মাত্র আপনার থেকে শুবিধা নেয়ার জন্য, কাজেই আপনার থেকে ভালো পেলে, আপনাকে ছেড়ে যাবে স্বাভাবিক।
এইটা যে শুধু মেয়েরা করে এমন না। ছেলেরাও এমন করে। দেখবেন ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটির জন্য ক্লাসের সব চেয়ে ভদ্র ছেলেটিও নোট নিয়ে আসে। এর বাইরেও অনেক সমস্যা আছে। যেগুলা জানতে আমাকে ফেজবুকে নক দিতে পারেন।
একটা ব্যাপার বলে রাখি, মিলিয়ে নিয়েন নিজের সাথে বা সিনিয়র কারও থেকে ভেরিফাই করে নিয়েন। ভার্সিটির প্রথম সময়ের যে সার্কেল আপনাদের হয় সেগুলো সেমিস্টার বাই সেমিস্টার ভেজ্ঞে যায়। কাজের এই ব্যাপার গুলো নিয়ে বেশি সিরিয়াস হওয়ার কিছু নাই। আপনার জিএফ/বিএফ কিছুদিন গেলে দেখবেন আপনারই বেস্ট ফ্রেন্ড এর জিএফ/বিএফ। এটা আপনি চাইলেও হবে আর না চাইলেও হবে।
আপনি যদি আপনার পার্টনার হওয়ার সাথে সাথে শো-অফ করেন, এর পর আপনার বন্ধুর জিএফ যখন আপনার বন্ধুর হবে, কেমন হবে? তাই শুরুতে এদিকে না যাওয়াই ভালো। আর গেলেও একটু গোপন রাখুন। ট্রাস্ট করুন, প্রথম ৩-৪ সেমিস্টার এ আমার কথার সত্যতা পাবেন।
শেষ কথা-
জীবনে ভালো কিছু করার জন্য প্রস্তুতির সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে ইউনিভার্সিটি লাইফ। এই সময়ে একটু ঠিক রাস্তায় থাকলে লাইফে অনেক দূর যাওয়া যাবে। আর না হলে গোলায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কম্পিউটার সাইন্স এ ভর্তির পর এই পরামর্শ গুলো মেনে চললে ভালো কিছু করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
কম্পিউটার সায়েন্স অসাধারন একটা সাবজেক্ট। কিন্তু এটা সহজ কোন সাবজেক্ট না। আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে, শিখতে হবে, সামনে এসে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে দেখবেন, পড়া শেষ হওয়ার আগেই জব হয়ে গেছে। আর না হলে, নিজেকে, ভার্সিটিকে দোষ দিয়ে সেলফ সেটিস্ফিকেশন পাবেন ঠিকই কিন্তু দিন শেষে বেকার আপনিই থাকবেন।
2 thoughts on “কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তির পর প্রথম সেমিস্টারে কি করা উচিৎ?”