ফ্রেস কম্পিউটার গ্রাজুয়েটদের অনেকে মনে করেন, আমাদের দেশে ফ্রেশ সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্যালারি অনেক কম। বিশেষ করে, অনেক ট্রল দেখি, ক্যারিয়ার পোর্টাল এ অনেক গুলো রিকোয়ারমেন্ট চাওয়ার পর স্যালারি অফার করা হয়েছে ১২ হাজার। কিন্তু ফ্রেস গ্রাজুয়েটদের স্যালারি কি আসলেই কম, নাকি এর মধ্য কোন কাহিনি আছে, জানতে চাইলে পুরো ব্লগ মন দিয়ে পড়তে থাকুন।
এই ব্লগটি আমার ব্যাক্তিগত এক্সপেরিয়েন্স থেকে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিতে যারা চাকরি করছেন তাদের সাথে কথা বলে লেখা হচ্ছে।
প্রথম কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে প্রচুর কম্পিউটার সায়েন্স গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে প্রতি সেমিস্টার এ। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, এদেশের এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে সিএসই ডিপার্টমেন্ট নেই। যেহেতু, প্রতি সেমিস্টার এ, প্রচুর নতুন গ্রাজুয়েট প্রতি বছর বের হচ্ছে কিন্তু চাকরির বাজার সেই তুলনায় বড় হচ্ছে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই, চাকরীর এভারেজ বেতন কমে যাচ্ছে।
যেহেতু, স্টার্ট-আপ কোম্পানি গুলো অল্প বেতনে অধিক কর্মী পাচ্ছে, তাই তারা বেশি বেতন দিয়ে কর্মী হায়ার করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ছোট কোম্পানি গুলো এ রকম নীতিতে থাকলেও, বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে এটা আলাদা। এখনও অনেক বড় কোম্পানি আছে, যারা ৪০হাজার থেকে ১লাখ টাকা দিয়ে ফ্রেস ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করে থাকেন।
৪ ধাপে ইংরেজীতে কথা বলুন গেরান্টি সহকারে!
তবে, বড় কোম্পানি গুলোতে চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক দক্ষতার প্রয়োজন। এর কারন হচ্ছে, জায়ান্ট কোম্পানি গুলো রিস্ক নিতে চায় না। স্যালারি বেশী দিয়ে, ভাল কর্মী পেতে চায়।
আবার, বাংলাদেশে অনেক জায়ান্ট কোম্পানি আছে, যারা শুরুতে অনেক কম টাকা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি তাদের স্যালারি স্ট্রাকচার দেখেন, দেখবেন ৬মাস-১বছর পর পর তাদের স্যালারি রিভিউ করা হচ্ছে। যার সোজা অর্থ হচ্ছে, স্কিল থাকলে কয়েক বছরের মধ্য স্যালারি ব্যালেন্স হয়ে যাবে।
এটি হচ্ছে, স্টার্ট-আপ কোম্পানি গুলোর পলিছি। আর তারা এই সিস্টেম করার বিশেষ কিছু কারনও আছে। যেমন, আমাদের দেশে যখন আমরা ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করি, দেখা যায় সেই ইঞ্জিনিয়ার কাজ শেখার পর অন্য হাউজ এ মুভ করে চলে যায়। আর এভাবে চলে গেলে যে কোন কোম্পানির লস হয়। কাজ শেখানো এক ধরনের ইনভেস্ট আর যারা চলে যায়, তারা এটার অপব্যাবহার করেন।
জীবনে সফল হওয়ার ১৩ টি সিক্রেট বা কৌশল!
এর জন্যই, শুরুতে অনেক বেশি স্যালারি দিয়ে স্টার্ট-আপ কোম্পানি গুলো ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করেন না। যারা লং টাইম কাজ করবেন, কোম্পানির এসেট যারা তাদের কে ইনক্রিমেন্ট এর সময়, স্যালারি ব্যালেন্স করে দেয়া হয়।
ফ্রেশ সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্যালারি নিয়ে সমস্যা আছে তাদের জন্য ৪টি পরামর্শঃ
১। আপনি হাই কোয়ালিটি স্কিল গ্যাদার করুন। এমন ভাবে স্কিল্ড হন, যাতে বাংলাদেশী বা বিদেশি টপ কোম্পানি গুলো আপনাকে হায়ার করতে আগ্রহী হয়। মনে রাখবেন, বিদেশি বা বাংলাদেশী টপ কোম্পানি গুলো শুরুতেই অনেক ভালো পরিমান স্যালারি অফার করে থাকে।
২। টপ কোম্পানিতে জব না পেলেও, যে কোন একটি কোম্পানিতে জবে ঢুকে যান। জব করার পাশা-পাশি নিয়মিত স্কিল ডেভেলপ করুন। যাতে করে সেই কোম্পানির কাজ কর্মে কন্ট্রিবিউট করে, সেই কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে পারেন। যখন আপনি কোম্পানিকে এগিয়ে নিবেন, তখন কিন্তু স্যালারি বৃদ্ধি পাবে এবং এক সময় সেটা ব্যালেন্স স্যালারি হবে।
কম্পিউটার সাইন্স এর ৩ ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি পরামর্শ
৩। ঘন ঘন জব সুইচ করবেন না। শুরুতে আপনি যেখানে চাকরি শুরু করলেন, সেখানে কাজ শিখে বড় কোম্পানিতে চলে যাবেন না। এতে করে, ছোট কোম্পানির অনেক লস হয়। আর যদি জব সুইচ করতেই চান, তাহলে রানিং কোম্পানিকে বিপদে রেখে যাবেন না। ভালো অফার পেলে তো সেখানেই যাবেন, কিন্তু তাই বলে রানিং ফার্ম কে বিপদে রেখে যাওয়া কারও উচিৎ নয়।
জব সুইচ এর সময় মনে রাখবেন, যখন আপনি ফ্রেসার ছিলেন আর কেউ আপনাকে জবে নেয় ন। অথবা আপনার স্কিলস ল্যাকিং এ কেউ হায়ার করছিল না, সেই বিপদের সময়ে এই ছোট কোম্পানি কিন্তু আপনাকে হায়ার করেছিল।
৪। সিস্টেম চেঞ্জ এ কাজ করুন। যারা সফটোয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করছেন এই মুহুর্তে, যারা স্যালারি স্ট্রাকচার ডিফাইন করছেন, তারাও কিন্তু আমাদের মত সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তারা কিন্তু স্যালারি স্ট্রাকচার বদলাচ্ছেন না। এটা আপনি মাথায় রাখবেন। যখন আপনি সিনিওর হবেন, তখন এই চেঞ্জিং এ কাজ করুন। যখন আপনি চেষ্টা করবেন আর সাথে সাথে আরও ১০জন চেষ্টা করবে, তখন কিন্তু সিস্টেম চেঞ্জ হবেই।
এক সময় ফ্রেশ সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্যালারি ব্যালেন্স হবে, সময়ের সেরা স্যালারি হবে। আমাদের গ্রাজুয়েট রা যেমন সস্তি পাবে, তেমনি কাজে আসবে কয়েক গুন বেশি গতি।